মার্কিন গবেষকরা সিরিয়ার একটি সমাধি থেকে আঙুলের মতো ছোট চারটি মাটির সিলিন্ডার আবিষ্কার করেছেন। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম বর্ণলিপি বলে ধারণা করা হচ্ছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কার্বন-১৪ পরীক্ষার মাধ্যমে দেখেছেন, এই সিলিন্ডারগুলো খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০ সালে তৈরি। এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত অন্য যে কোনো বর্ণলিপির চেয়ে প্রায় ৫০০ বছর পুরোনো।
খবর অনুসারে, গবেষকরা একটি ব্রোঞ্জ যুগের সমাধি খুঁজে পান, যেখানে ছয়টি দেহাবশেষ ছিল। এগুলোর সঙ্গে ছিল সোনা ও রুপার গয়না, রান্নার সামগ্রী, একটি বর্শার ফলক এবং মাটির পাত্র। পাত্রগুলোর পাশেই চারটি হালকা পোড়ানো মাটির সিলিন্ডার পাওয়া যায়, যেখানে বর্ণলিপি খোদাই করা ছিল।
এই সিলিন্ডারগুলো ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হলেও ২০২১ সালে একটি গবেষণাপত্রে তা উল্লেখ করা হয়। তবে সম্প্রতি আমেরিকান সোসাইটি অব ওভারসিজ রিসার্চের বার্ষিক সভায় এই আবিষ্কারের বিস্তারিত জানানো হলে এটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক গ্লেন শোয়ার্জ বলেন, ‘এই আবিষ্কার প্রমাণ করে মানুষ অনেক আগেই নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিল এবং তা একেবারেই ভিন্ন একটি অঞ্চলে।’
প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয়রা কিউনিফর্ম বা চিত্রলিপি ব্যবহার করত, প্রাচীন মিসরীয়রা হায়ারোগ্লিফিকস তৈরি করেছিল, আর চীনা লিপি ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছিল। তবে আগে মনে করা হতো বর্ণমালার উদ্ভব খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০ সালের পরে মিসরের আশপাশে। কিন্তু সিরিয়ার এই লিপি তা বদলে দিতে পারে।
গবেষকরা মনে করেন, এই বর্ণলিপি ভাষাকে শুধু রাজপরিবার বা উচ্চ শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। তবে এখনও এই লিপির অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
অধ্যাপক শোয়ার্জ বলেন, সিলিন্ডারগুলোতে ছিদ্র ছিল। সম্ভবত এগুলো কোনো পাত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং পাত্রের উপাদান, উৎস বা মালিকানার বিবরণ দিত। কিন্তু লিপি না পড়া পর্যন্ত আমরা শুধু অনুমানই করতে পারি।
এই আবিষ্কার ভবিষ্যতের গবেষণায় বর্ণলিপি ও ভাষার ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র : এনডিটিভি
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল