শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সাসেক্সের নতুন জাদুকর

৪-০-২৩-৪

মেজবাহ্-উল-হক

সাসেক্সের নতুন জাদুকর

এসেক্সের বিপক্ষে আরও একটি উইকেট। উচ্ছ্বসিত মুস্তাফিজের হাততালি ছবি: সৌজন্যে

বাংলাদেশ থেকে কোনো টিভিতে ম্যাচটি দেখা যায়নি। ক্রিকেট ভক্তদের তাই দৃষ্টি রাখতে হয়েছে সাসেক্সের ফ্যানপেজগুলোতে। কাউন্টটি ক্লাবটির টুইটার-ফ্যানপেজে নিয়মিত আপডেটও দেওয়া হচ্ছিল। মুস্তাফিজের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় উইকেট শিকার! কাটার মাস্টার চতুর্থ উইকেট শিকারের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যাটাসে লেখা হয়, ‘চার নম্বর উইকেট শিকার করলেন দ্য ফিজ! এখন ৪/১৩! আমরা মুস্তাফিজের পঞ্চম উইকেট শিকার দেখার অপেক্ষায়!’ 

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের পেসার পঞ্চম উইকেটটি পাননি। উল্টো শেষ চার বলে দিয়েছেন ১০ রান! তাতে কি? ৪-০-২৩-৪ —এই স্পেলটাই বা কম কিসে! ২৪টি বল করে ১৫টি বল ডট দিয়েছেন। স্বপ্নিল এক স্পেল।

মুস্তাফিজের জাদুকরী বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত ২৪ রানের দারুণ এক জয় পেয়েছে সাসেক্স। ২০১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে প্রতিপক্ষ এসেক্স ১৭৬ রানের বেশি করতে পারেনি। ম্যাচসেরা হওয়ার জন্য এ ম্যাচে মুস্তাফিজের কিপেট বোলিংই যথেষ্ট ছিল! সেখানে চার উইকেটও নিয়েছেন। মুস্তাফিজের বোলিংয়ে মুগ্ধ সাসেক্স।

কাটার মাস্টারকে পেতে কতই না কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ইংলিশ কাউন্টি ক্লাবকে। আইপিএল থেকে আসার পর ইনজুরির জন্য পুনর্বাসনে থাকতে হলো বেশকিছু দিন। তারপর খেলার জন্য মুস্তাফিজ সম্পূর্ণ প্রস্তুত হলেও পড়ে যান ভিসা জটিলতায়। সাসেক্স যেন আশাই ছেড়ে দিয়েছিল। সেই মুস্তাফিজ সব সমস্যা মাড়িয়ে ইংল্যান্ড গেলেন এবং প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করে দিলেন।

সাসেক্সের অধিনায়ক লুক রাইট বলেন, ‘রহমানকে (মুস্তাফিজ) এখানে আনতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অনেকের কঠোর পরিশ্রমের ফলেই তাকে আমরা আনতে পেরেছি। আমাদের পরিশ্রমের মূল্যটা তিনি কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়েও দিয়েছেন। দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের পর যা দেখালেন তা বিশ্বাস করাই কঠিন। সত্যিই অসাধারণ এক মেধাবীকে আমরা পেয়েছি।’

এলেন, দেখলেন, জয় করলেন! —মুস্তাফিজের বেলার এটি দারুণ মানায়। সত্যিই মুস্তাফিজ যেন ক্রিকেট দুনিয়ায় এক জাদুকর! যিনি হাতের ক্যারিশমায় যাচ্ছেতাই করতে পারেন। জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেকেই বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। আইপিএল সাদামাটা দল সান রাইজার্স হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। এখন তার মিশন সাসেক্স!

বৃহস্পতিবার রাতে এসেক্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করে সাসেক্স ২০০ রান করার পরও নির্ভার উপায় ছিল না! কেন এসেক্সের শুরুটা ছিল ভয়ঙ্কর। প্রথম ৫ ওভার থেকেই ৫০ রান করে তারা। অধিনায়ক লুক রাইট পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বল তুলে দেন মুস্তাফিজের হাতে।

আইপিএলে দাপটের কারণেই কাটার মাস্টারের আগ্রাসী চেহারাটা যতই মনে থাক সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে ২০ বছরের একটা তরুণ প্রথম দিনই কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন তা নিয়ে শঙ্কা ছিলই। কিন্তু না, প্রথম ওভারেই মুস্তাফিজ ক্যাপ্টেন রাইটকে আশ্বস্ত করলেন, তিনি কিছু একটা করতেই ইংল্যান্ড গিয়েছেন। প্রথম ওভারে দিলেন মাত্র চার রান। উইকেট নেই।

হয়তো প্রথম ওভারেই স্লোয়ার-কাটার দেখে রাইট যা বোঝার বুঝে গিয়েছিলেন। তাই দ্বিতীয় ওভারে বল তুলে দিতে একটু দেরি-ই করলেন। ১৫ ওভার শেষে দেখা গেল এসেক্স জয়ের পথেই রয়েছে। তবে ১৬তম ওভারে মুস্তাফিজকে আনার পরই সব হিসাব পাল্টে গেল। মাত্র দুই রান দিয়ে রবি বোপারার উইকেটটি তুলে নেন কাটার মাস্টার। ১৮তম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভারে বোলিং করতে এসে ডেসকাট ও টেলরকেও ফিরিয়ে দেন।

কার্যত ওই ওভারেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় এসেক্স। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ৪৮ রান। ১৯তম ওভারে সাসেক্সের বোলার মিলস ১৭ রান দিলেও শেষ ওভারে মুস্তাফিজ ১০ রানের বেশি দেননি। সঙ্গে একটি উইকেটও তুলে নেন। 

দারুণ এই জয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে সাসেক্স। ১২ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে দলটি উঠেছে গ্রুপের চার নম্বরে। গতকাল পর্যন্ত ১৩ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ছিল গ্লোসেস্টারশায়ার। ১১ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে গ্লামারগন। ১১ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় মিডলসেক্স। শেষ দুই ম্যাচে মুস্তাফিজদের প্রতিপক্ষ সারে (গত রাতে ছিল ম্যাচটি) ও গ্লামারগন (২৮ জুলাই)। ম্যাচ দুটিতে জিততে পারলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে কোয়ার্টার ফাইনাল। মুস্তাফিজের ছোঁয়ায় যেন ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে দলটির। সান রাইজার্স হায়দরাবাদের মতো শেষ পর্যন্ত কাটার মাস্টারের কল্যাণে এই সাসেক্স-ই কাউন্টি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় কি না! সেটা সময়ই বলে দেবে। আপাতত —মধুর চিন্তায় মগ্ন সাসেক্স ও মুস্তাফিজ ভক্তরা!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

সাসেক্স : ২০০/৬ (২০ ওভার) (জর্দান ৪৫*, সল্ট ৩৩, রাইট ৩২; বোপারা ২/৩২)

এসেক্স : ১৭৬/৮ (২০ ওভার) (লরেন্স ৩৬, বোপারা ৩২, ডেসকাট ২৬; মুস্তাফিজ ৪/২৩, মিলস ১/৩৬)

ফল : সাসেক্স ২৪ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা : মুস্তাফিজুর রহমান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর