বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

হ্যাটট্রিক শিরোপার অপেক্ষায় রিয়াল

ক্রীড়া ডেস্ক

হ্যাটট্রিক শিরোপার অপেক্ষায় রিয়াল

এমন বাঁধভাঙা উল্লাস তো হবেই। সেমিফাইনালে ফিরতি ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে ড্র করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা তৃতীয়বার ফাইনালে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ —এএফপি

গল্প লেখা হলো না। গল্পের রসদ হাতে নিয়ে লিখতে পারল না বায়ার্ন মিউনিখ। উল্টো নতুন ইতিহাস লেখার রাস্তায় উঠে এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ। শুধু রিয়াল নয়, দলটির কোচ জিনেদিন জিদান ইতিহাসের সোনালি পাতায় চিরস্থায়ী হওয়ার পথেও হাঁটছেন ফাইনালে উঠে। পারা, না পারার গল্পের ম্যাচটিতে জয় পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ। হারেনি বায়ার্ন মিউনিখও। ২-২ গোলে ড্র হয়ে ম্যাচটি। সমানে সমান ম্যাচটির ফল বলছে বায়ার্নের গল্প লিখতে না পারার ব্যর্থতার কথা। আবার ম্যাচটিই বলছে ফুটবলপ্রেমীদের রিয়ালের ইতিহাস লেখার কথা। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল ও বায়ার্নের ম্যাচটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে উঠার দ্বিতীয় লেগ। ড্র হয়েছে ২-২ গোলে। প্রথম লেগে ২-১ গোলে জিতেছিল জিদানের দল। দুই লেগ মিলিয়ে ফল ৪-৩। ফাইনালে রিয়ালের প্রতিপক্ষ লিভারপুল, না রোমা? নির্ধারিত হয়েছে গত রাতে। দুই দলের প্রথম লেগে লিভারপুল জিতেছিল ৫-২ গোলে।  রিয়াল ফাইনালে জায়গা নিয়েছে টানা তৃতীয়বারের মতো। সবমিলিয়ে ১৬ বার। এই প্রথম টানা দুই ম্যাচে গোল করতে পারেননি পাঁচবারের বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। হঠাৎ যেন ছন্দ হারিয়ে ফেলেছেন বিশ্বসেরা ফুটবলার। এই ছন্দ হারানোয় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জিদান। যদিও আশাবাদী রোনালদোর ফিরে আসার বিষয়ে, ‘রোনালদো গোল পায়নি। আমি চিন্তিত নই। আমি জানি রোনালদো ফিরবেন এবং সেটা হবে রাজকীয়।’ রোনালদোর গোল না পাওয়ার বিষয়টি শুধু রিয়ালের জন্য নয়, পর্তুগালের জন্যও শঙ্কার। জুনে শুরু বিশ্বকাপ ফুটবল। ফুটবল মহাযজ্ঞে অন্যতম ফেবারিট ইউরো চ্যাম্পিয়ন রোনালদোর পর্তুগাল।

প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে দারুণ খেলেও শুধুমাত্র নিজেদের দোষে হেরেছিল বায়ার্ন। প্রথম লেগে আত্মঘাতী গোলও ছিল। তারপরও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল জার্মান ক্লাবটি। পরশু রাতে ফিরতি লেগে ম্যাচে ৬০ শতাংশ নিজেদের পায়ে বল রেখেও শুধু গোলরক্ষকের ভুলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি বায়ার্ন। প্রথম লেগে আত্মঘাতী গোল করেছিলেন জশুয়া কিমিচ। সেটা পুষিয়েছিলেন গোল করে। পরশু রাতে রিয়ালের জালে প্রথম গোলটি কিমিচেরই। ম্যাচের ৩ মিনিটে এগিয়ে যায় জার্মান চ্যাম্পিয়নরা। বিশাল স্টেডিয়ামে মাত্র দর্শকরা বসেছেন। তখনই উৎসবে মেতে উঠে সফরকারী বায়ার্ন। ডান প্রান্ত থেকে আসা বলটি ধরে কোরিন্টিন তোলিসো শট নেন। শটটি ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস। বল চলে আসে ফাঁকায় দাঁড়ানো কিমিচের পায়ে। কালক্ষেপণ না করে ঠাণ্ডা মাথায় জালে বল পাঠিয়ে এগিয়ে নেন বায়ার্নকে (১-০)। তবে খুব বেশি সময় এগিয়ে থাকা হয়নি সফরকারীদের। ১১ মিনিটে সমতায় ফিরে স্বাগতিকরা। বাঁ প্রান্ত থেকে মার্সেলোর দুর্দান্ত ক্রসে অসাধারণ হেডে সমতা আনেন ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেনজামা (১-১)। সমতায় আসার পর দুই দলই বল নিয়ন্ত্রণ নিতে পরিকল্পিত ফুটবল খেলতে থাকে। এরমধ্যে ২৯ মিনিটে গোল মিস করে রিয়াল। ৩৪ মিনিটে রিয়ালের সাবেক স্ট্রাইকার জেমস রদ্রিগেজ ব্যর্থ হন বায়ার্নকে এগিয়ে নিতে। সমতায় থেকেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে যায় জিদানের দল। ৪৬ মিনিট গোলরক্ষকের ভুলে গোল করেন বেনজামা। ডি বক্সের মাথা থেকে ব্যাক পাস করেন তালিসো। বলটি ক্লিয়ার করতে পারেননি গোলরক্ষক। না ধরবেন, না কিক করবেন-এমন ভাবনায় বল তার নিচ দিয়ে চলে যায়। দৌড়ে এসে বেনজামা বল পাঠিয়ে রিয়ালকে উৎসবের রঙে ভাসান (২-১)। ওই গোলে টানা তৃতীয়বার ফাইনালে ওঠার উৎসবে মেতে উঠে রিয়ালের ৯৫ হাজার দর্শক ও গোটা দল। পিছিয়ে পড়ে বায়ার্ন পাগল হয়ে উঠে ম্যাচে ফিরতে। ৫১ মিনিটে রিয়ালের গোলরক্ষক কেইলর নাভাস একটি গোল রক্ষা করেন। ৬০ মিনিটে রদ্রিগেজ আবার গোল মিস করেন। তিন মিনিট পর আবার সুযোগ পান রদ্রিগেজ এবং সেটা বাঁচিয়ে দেন নাভাস। ফিরে আসা বলটি আর নষ্ট করেননি কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার। ভলিতে সমতা আনেন ম্যাচে (২-২)। ওই গোলের পর জেতার জন্য অলআউট খেলতে থাকে বায়ার্ন। কিন্তু গোল না পাওয়ায় হতাশ হয়েই মাঠ ছাড়তে হয় জার্মান চ্যাম্পিয়নদের। আর টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠার আনন্দ নিয়ে উৎসব করতে করতে মাঠ ছাড়েন রিয়াল সমর্থকরা।

সর্বশেষ খবর