সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

টি-২০তে ‘নো-বল’ ক্রাইম!

মেজবাহ্-উল-হক

টি-২০তে ‘নো-বল’ ক্রাইম!

ওপেনিংয়ে নেমে ৫ রান করেই বোল্ড মুশফিকুর রহিম। ভাঙা উইকেটের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি -রোহেত রাজীব

ইনিংসের প্রথম বলেই যদি হয় ম্যাচের সেরা  ডেলিভারি সেখানে ব্যাটসম্যানের কিই-বা করার  আছে? না, কিছুই করার ছিল না আফগান ওপেনার রহমতুল্লাহ গারবেজের। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বল বল মিডল স্ট্যাম্পে পরে বাঁক খেয়ে গিয়ে আঘাত করে অফ স্ট্যাম্পে!

রহমতুল্লাহ কপি-বুক স্টাইলে ডিফেন্স করলেন, কিন্তু  কোনো লাভ হলো না! গ্যালারি গর্জন শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখলেন তিনটি স্ট্যাম্পের জায়গায় একটি কম! কারণ সাইফউদ্দিনের বলে অফ-স্ট্যাম্প ছিটকে চলে  গেছে কয়েকগজ দূরে!

সাকিব আল হাসানও প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে  নেন। প্রথম বলে বাউন্ডারি হজম করলেও চতুর্থ বলে ঠিকই হযরতুল্লাহ জাজাইকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দেন সাকিব। দুই ওভারে আফগানিস্তানের দুই ওপেনার সাজঘরে। অবশ্য এই উইকেটে বড় অবদান কিন্তু লিটন দাসের। অনেকটা দৌঁড়ে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে যেভাবে বল তালুবন্দী করলেন তা ছিল  দেখার মতো! টি-২০তে আফগানরা বাংলাদেশের চেয়ে সেরা। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন ধাপ ওপরে। সেই ভাবটাও আছে তাদের খেলার মধ্যে। তাই দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পরও তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে বিশাল ছক্কা হাঁকান নাজিব তারাকাই। সাইফ খুব ভালো করেই জানতে তাকে ব্যাকফুটে পাঠাতে পাল্টা আক্রমণ করবেই আফগানরা! তাই ইচ্ছা করেই যেন একটা শট বল দিলেন। আর তার ফাঁদে পা দিয়ে দিল নাজিব। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই দ্বিতীয় উইকেট পেয়ে  গেলেন সাইফউদ্দিন। আর তিন ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে আফগানরা তখন ধুঁকছে।  পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আবারও সাকিবের আঘাত। নাজিবুল্লাহ জাদরানকে দেখিয়ে দিলেন ড্রেসিংরুমের পথ। ছয় ওভারে ৪ উইকেট নেই রশিদ খানদের। এরপরও সেই আফগানিস্তান ২০ ওভারে করে ১৬৪ রান।

আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের তোপের মুখে পড়েছিলেন টাইগার দলপতি অধিনায়ক। ৪ ওভারে দিয়েছিলেন ৪৯ রান। কোনো উইকেটও পাননি। কিন্তু কাল মিরপুরে অন্য সাকিব। ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৮ রান। উইকেট দুটি। তবে আফগানদের বিরুদ্ধে কাল একটি মেডেন ওভারও আদায় করে নিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

তিন ওভার শেষে সাইফউদ্দিনের বোলিং ছিল ৩-০-১৬-৪! যা টি-২০তে স্বপ্নের মতো। কিন্তু শেষের ওভারে বিলাসী হয়ে গেলেন! দিয়ে ফেললেন ১৭ রান।

মুস্তাফিজুর রহমানও দারুণ বোলিং করেছেন। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২৫ রান। তবে কাটার মাস্টারের শেষের ওভারটি ছিল দেখার মতো। মাত্র তিন রান দিয়েছেন তিনি।  সাকিব, সাইফ ও মুস্তাফিজ মিলে ১২ ওভারে ৭৬ রান দিয়েছেন। তারপরও ২০ ওভার শেষে আফগানদের স্কোর ১৬৪! বাকি ৮ ওভার ও অতিরিক্ত মিলেই এসেছে ৮৮ রান। বিশেষ করে দুই পার্ট টাইমার সৌম্য ও মোসাদ্দেক মিলে ৩ ওভারে দিয়েছেন ৪৩ রান। আর ১৬৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বাংলাদেশ  হেরে যায় ২৫ রানে। এই টাইগার ক্যাপ্টেন ব্যাটসম্যানদের দায় দেখলেও কাঠগড়ায় উঠাচ্ছেন  বোলারদেরও। বিশেষ করে যারা নো-বল করেছেন! সাকিব বলেন, টি-২০তে নো-বল করা ক্রাইম। আমরা  যেভাবে শুরু করেছিলাম, ভালোভাবে শেষ করতে পারলে ওরা ১৩০ কিংবা ১৩৫র বেশি রান করতে পারতো না। কিন্তু আমরা পারিনি। গতকাল তাইজুলের বলে একবার আউট হয়েছিলেন আজগর আফগান! পরে দেখা যায়, নো-বল হয়েছে। আউট তো হয়নি, উল্টো ফ্রি-হিট। তাইজুলের ওই ওভার থেকেই আসে ১৫ রান। আরেকটি নো-বল করেছেন সাইফুদ্দিনও। ছোট ছোট এই ভুলগুলো আফগানিস্তানকে বড় স্কোর এনে দেয়।

বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ এ ম্যাচেও হুরমুর করে ভেঙে পড়ে। ৩২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রানে অলআউট। হারের জন্য আত্মবিশ্বাসের অভাবকেই দায়িত্ব করছেন সাকিব। টাইগার দলপতি বলেন,  চেষ্টায় কারও ঘাটতি নেই, তবে আছে ত্রুটি!

 যে উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কা জ্ঞানহীন ব্যাটিং করলেন সেই একই উইকেটে ৫৪ বলে ৮৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে মহাবিপদ থেকে দলকে উদ্ধার করলেন মোহাম্মদ নবী। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কী নবীর কাছ থেকে কিছু শিখলেন!

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আফগানিস্তান ইনিংস : ১৬৪/৬ (২০ ওভার) রাহমানউল্লাহ ০, হযরতউল্লাহ ১, নাজিব ১১, আজগর ৪০, নাজিবুল্লাহ ৫, মোহাম্মদ নবী ৮৪*, গুলবদিন ০, করিম ৫*, সাইফুদ্দিন ৪/৩৩, সাকিব ২/১৮, মুস্তাফিজ ০/২৫, তাইজুল ০/৩২, সৌম্য ০/৩১, মোসাদ্দেক ০/১২, মাহমুদুল্লাহ ০/৩।

বাংলাদেশ ইনিংস : ১৩৯/১০ (১৯.৫ ওভার) লিটন দাস ০, মুশফিক ৫, সাকিব ১৫, মাহমুদুল্লাহ ৪৪, সৌম্য ০, সাব্বির ২৪, আফিফ ১৬, মোসাদ্দেক ১২, সাইফুদ্দিন ২, তাইজুল ০, মুস্তাফিজ ১৫, মুজিব ৪/১৫, ফরিদ ২/৩৩, করিম ০/২৭, মোহাম্মদ নবী ০/১১, রশিদ খান ২/২৩, গুলবদিন ২/২৭।

ফল : আফগানিস্তান ২৫ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ নবী (আফগানিস্তান)

সর্বশেষ খবর