শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

লিটনের উত্থান-পতনের গল্প

মেজবাহ্-উল-হক

লিটনের উত্থান-পতনের গল্প

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-বিপিএলের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের সদস্য ছিলেন লিটন কুমার দাস। তখন বয়স ছিল মাত্র ১৮। দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন বলে নিয়মিত একাদশে সুযোগ পাননি। কারণ তখন প্রথম উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয় ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। নেটে লিটনের ব্যাটিংস্টা.ইল দেখেই মুগ্ধ হয়ে যান গ্লাডিয়েটর্সের ইংলিশ কোচ ইয়ান পন্ট।

ঢাকাকে চ্যাম্পিয়ন করে দেশে ফিরে পন্ট লিটনকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দেন। সেখানে লিখেন, ‘আগামীতে বাংলাদেশ দল এমন একজন ক্রিকেটারকে পেতে যাচ্ছে, যার মধ্যে আমি সুপারস্টার হওয়ার সব লক্ষণই দেখতে পেলাম। তার নাম লিটন দাস।’

এর ঠিক তিন বছর পর জাতীয় লিগে ৫ সেঞ্চুরি এবং ৮৩.৩৩ গড়ে ১০২৪ রান করে জাতীয় দলে নিতে যেন নির্বাচকদের বাধ্য করেন! কিন্তু জাতীয় দলের শুরুটা বড্ড সাদামাটা। প্রথম ১৭ ওয়ানডেতে কোনো সেঞ্চুরি কিংবা হাফ সেঞ্চুরিও নেই। পন্টের সেই লিটনকে পাওয়া যাচ্ছিল না। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে যান দ্রুতই।

২০১৭ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডবল সেঞ্চুরি করে ভারতের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টে ডাক পান। ওই বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ১৪ ম্যাচে ৭৫২ রান করে ওয়ানডে দলেও ফেরেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচে আবারও ফ্লপ, আবারও বাদ পড়ে যান।

পরের বছর জাতীয় লিগে ছয় ম্যাচে ৭৭৯ রান করেন, ছিল ২৭৪ রানের এক ইনিংস। ২০১৮ সালে আমিরাতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের দলে জায়গা করে নেন। পুরো টুর্নামেন্টে সাদামাটা ব্যাটিং করলেও ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলেন ১২১ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। ক্রিকেট-ভক্তদের মোহিত করেন এক ইনিংসেই। লিটনের ওই ইনিংসে ছিল অন্যরকম বার্তাও।

লিটনের মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত চরিত্র! তার ইনিংস বড় না হলেও ছোট ছোট ইনিংসগুলোই ছিল চোখে পড়ার মতো।

২০১৯ বিশ্বকাপে দলে থাকলেও একাদশে জায়গা হচ্ছিল না। প্রথম সুযোগ পান টনটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচে। তাও নিজের প্রিয় পজিশন ওপেনিংয়ে নয়! কিন্তু ৫ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে খেলেন ৬৯ বলে অপরাজিত ৯৪ রানের এক টর্নেডো ইনিংস। লিটনের ক্যারিশমায় ক্যারিবীয়দের দেওয়া ৩২২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ জিতে যায় ৫১ বল হাতে রেখেই।

তারপর আবারও সাদামাটা। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিল লিটনের ক্যারিয়ার।

তবে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই দেখা গেল আসল লিটনকে। একমাত্র টেস্টে খেললেন ৫৩ রানের ইনিংস। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি ও মুমিনুলের সেঞ্চুরির পর ৭ নম্বরে নেমে এর চেয়ে বড় ইনিংস খেলার সুযোগও ছিল না!

প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ১২৬ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরির পর যেভাবে ব্যাট করছিলেন, মনে হচ্ছিল যেন ডবল সেঞ্চুরি হয়ে যাবে। কিন্তু পেশিতে টান পড়ায় ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে যান।

দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ রানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট। তামিম স্টেট ড্রাইভ খেললেন, নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা লিটন রান নেওয়ার জন্য দৌড় দিলেন; বল জিম্বাবুয়ের ফিল্ডারের হাতে লেগে গিয়ে স্টাম্পে আঘাত করে। ওই ম্যাচেই তামিম ১৫৮ রানের ইনিংস খেলেন। নিজের আগের করা ১৫৪ রানের রেকর্ডটি নিজেই ভাঙেন তামিম।

পরের ম্যাচে লিটন তামিমকে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে রেখেই গড়লেন ইতিহাস। খেললেন ১৭৬ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস।

তিন ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি করে তামিমের সঙ্গে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়ে যান।

দুই টি-২০-তে ৫৯ ও অপরাজিত ৬০ রান করে আবারও ম্যান অব দ্য সিরিজ।

অনেকে ভাবতে পারেন, জিম্বাবুয়ের মতো দুর্বল দলকে সামনে পেয়েছে তাই। কিন্তু এটা তো ঠিক, প্রতিপক্ষ যত দুর্বলই হোক শতভাগ ফোকাস না থাকলে প্রতি ম্যাচে লম্বা রান করা কঠিন।

তাহলে লিটনের এমন অভূতপূর্ব সাফল্যের রহস্য কী? লিটন জানান, ‘আগে একটি ভালো ইনিংস খেলার পর আমি কিছু রিলাক্স হয়ে যেতাম, ভাবতাম পরের ম্যাচে এমনিই হয়ে যাবে। সে কারণে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটত। কিন্তু এই সিরিজে আমি সব সময় ফোকাসড ছিলাম। কখনো মনোযোগ হারাইনি।’

এ সিরিজে দাপুটে পারফর্ম করায় লিটনের চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে গেছে। সে কথা নিজেই জানিয়েছেন, ‘আমি আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি পরিশ্রম করব। অনেক বেশি অনুশীলন করব, যাতে ধারাবাহিক থাকতে পারি। এটাই আমার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এখন।’

সত্যিই কি লিটন পারবেন ধারাবাহিক ধরে রাখতে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর