শিরোনাম
সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

মিরাজ ম্যাজিক শান্তর ছন্দ

মেজবাহ্-উল-হক

মিরাজ ম্যাজিক শান্তর ছন্দ

ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে আউট করার পর মিরাজকে ঘিরে উল্লাসে মেতেছেন সাকিব-লিটনরা। মিরাজ ১২ রান খরচ করে নিয়েছেন ৪ উইকেট ছবি : রোহেত রাজীব

প্রেস কনফারেন্স কক্ষে হাসতে হাসতে প্রবেশ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টি-২০তে তিনি একাদশেই ছিলেন না, অথচ দ্বিতীয় ম্যাচেই জয়ের নায়ক। বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন। ব্যাট হাতে দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ১৬ বলে ২০ রান। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের দিনে ব্যাট হাতে দাপট দেখিয়েছেন নাজমুল হাসান শান্ত। ৪৭ বলে ৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে বাইশগজ ছাড়েন।

মিরাজের ম্যাজিক এবং শান্তর ছন্দে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয় করেন টাইগাররা। এর আগে কোনো ফরম্যাটেই ইংলিশদের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় ছিল না। তাই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে উচ্ছ্বসিত ম্যাচসেরা মিরাজ।

ম্যাচ শেষে এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘ম্যাচ জিতলে সবারই ভালো লাগে। আমারও ভালো লাগছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতেছি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমরা আগে কখনো সিরিজ জিতিনি। এবারই প্রথম জেতায় বেশি আনন্দ লাগছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে সিরিজে হারানোটা অনেক বড় পাওয়া আমাদের জন্য।’

মিরাজের এ সাফল্যে বড় অবদান টিম ম্যানেজমেন্ট তথা ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসানের। কারণ, প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দেওয়ার পরও ‘উইনিং কম্বিনেশন’ ভেঙে যেন চ্যালেঞ্জ নিয়েই মিরাজকে দলে নিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন। এক বছর পর টি-২০ দলে সুযোগ পেয়েই নিজেকে উজাড় করে দিলেন এই অলরাউন্ডার।

মিরাজ বলেন, ‘টিম ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর আস্থা রেখেছিল। ভালো খেলে দলের জয়ে ভূমিকা রেখে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’

মিরাজ ইংলিশদের ব্যাটিং মেরুদ  ভেঙে দিয়েছেন। জয়ের ভিত গড়ে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। অন্যদিকে ব্যাটিং বাংলাদেশের একপ্রান্ত আগলে রেখে জয়ের পথ সুগম করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টি-২০তে ৫১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন। আর গতকাল খেললেন ৪৬ রানের হার না মানা ইনিংস। ওয়ানডে সিরিজেও ব্যাট হাতে শান্ত ছিলেন দুর্দান্ত। তিন ম্যাচে দুটি হাফ সেঞ্চুরি। শান্তকে নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘ওকে নিয়ে একটা সময় অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু এখন সে খুবই ভালো খেলছে। এটা কিন্তু বড় পাওয়া।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের অভিষেক হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তার ক্যারিশম্যাটিক বোলিংয়েই ইংলিশদের বিরুদ্ধে টেস্টে প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। এবার দীর্ঘ বিরতি দিয়ে টি-২০তে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেই বাজিমাত করলেন। ইংল্যান্ডকে সামনে পেলে যেন জ্বলে ওঠেন মিরাজ, ‘আমার অভিষেক হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তখনো ভালো করেছিলাম। এখনো ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভালো করছি। বড় দলের বিরুদ্ধে খেললে বাড়তি অনুপ্রেরণা কাজ করে। বড় দলের বিরুদ্ধে হারানোর কিছু থাকে না। আমরা সাহস করে খেলেছি। ভালো করেছি। এটাই একটা দলকে অনুপ্রাণিত করে।’

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কালকের এ জয়ে বড় অবদান রেখেছেন বোলাররা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ভয়ংকর ব্যাটিং লাইনআপকে মাত্র ১১৭ রানে আটকে দেয় বাংলাদেশ। বোলিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিরাজ। কী মন্ত্র শিখে কাল মাঠে নেমেছিলেন টাইগার বোলাররা!

মিরাজ ছাড়া অন্যরাও দাপট দেখিয়েছেন। সাকিব তিন ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট। সপ্তম ওভারে তার দুর্দান্ত ব্রেক থ্রু (ফিল সল্টের উইকেট শিকার) বাংলাদেশ দলকে মোমেন্টাম এনে দেয়। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৫০ রান করা ইংল্যান্ডকে যেন আটকে দেন সাকিব। এরপর মিরাজ ও হাসান মাহমুদের ধাক্কা। ৫৭ রানে চার উইকেট নেই ইংলিশদের। গতকাল আর ম্যাচেই ফিরতে পারেনি সফরকারীরা। মিরাজ বলেন, ‘আমাদের বোলাররা খুবই ভালো করেছেন। উইকেটে টার্ন ছিল। তবে এতটা খারাপ ছিল না যে খেলা যাচ্ছিল না। ওদের শুরুটা যেমন ছিল তাতে মনে হচ্ছিল ১৬০ বা ১৭০ হয়ে যাবে। বোলাররা ভালো করায় আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। পর পর উইকেট পড়ায় ওরা আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি।’

বাংলাদেশের টার্গেট এখন সিরিজে ৩-০ করা। হোয়াইটওয়াশের কথা মনে করে দিতেই মিরাজের মুখচ্ছবি আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হাসতে হাসতে জয়ের প্রত্যয়ই ব্যক্ত করলেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হোয়াইটওয়াশ করার মজাই যে আলাদা।

 

 

 

সর্বশেষ খবর