চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি দর্শকে পূর্ণ। এই শহরে তামিম ইকবালের আলাদা ভক্তকুল আছে। এটা তামিম ইকবালেরই শহর। তাঁর ভক্তরা গতকাল স্টেডিয়ামের গ্যালারি পূর্ণ করে রেখেছিল। হাতে ছিল নানা রকম বাক্য লেখা প্ল্যাকার্ড। কোনো কোনোটাতে লেখা ছিল ‘বুম বুম তামিম’। একসময় পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদির ভক্তরা ‘বুম বুম আফ্রিদি’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে গ্যালারিতে আসত। তামিম ইকবালও বেশ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে এই উপাধি পেয়েছেন ভক্তদের কাছ থেকে। এবারের বিপিএলে তামিম ২৬টি চার ও ৮টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন ছয় ম্যাচে। রান করেছেন ২২২। গতকালও ছিল তাঁর ব্যাটে ঝড়। মাত্র ৪৮ বলে ৬১ রান করে ফরচুন বরিশালকে জয় উপহার দিয়েছেন। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জয় করেছেন তিনি। তবে তামিম ইকবালই নন, ব্যাটে ঝড় তুলেছেন তানজিদ হাসান তামিমও। দুই তামিমের ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখল চট্টগ্রামের দর্শকরা।
গতকাল ঢাকা ক্যাপিটালস সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ফরচুন বরিশালের মুখোমুখি হয়। একদিকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। অন্যদিকে পয়েন্টের তলানিতে থাকা দল। বলা যায়, ঢাকা ক্যাপিটালসের শেষ সুযোগ ছিল গতকাল। সেই সুযোগটাও কাজে লাগাতে পারল না দলটা। ফরচুন বরিশালের কাছে ৮ উইকেটের পরাজয়ের শীর্ষ চারের আশা আরও ফিকে হয়ে গেল ঢাকা ক্যাপিটালসের। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯.৩ ওভারে ১৩৯ রান করে অলআউট হয় ঢাকা। জবাবে তামিম ইকবালরা মাত্র ১৬ ওভারেই ১৪৫ রান করে জয় তুলে নেন। এ জয়ে ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে ফরচুন বরিশাল। ৮ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে ঢাকা ক্যাপিটালস। সামনের সব কটা ম্যাচ জিতেও সম্ভবত শীর্ষ চার আর নিশ্চিত করতে পারবেন না লিটন-তানজিদরা।
গতকাল ঢাকা ক্যাপিটালসের ইনিংসে একদিকে যেমন ছিল তানজিদ হাসান তামিমের দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ের গল্প। অন্যদিকে ছিল ফরচুন বরিশালের বোলারদের টপাটপ উইকেট শিকারের গল্পও। লিটন দাস (১৩ রান), মুনিম শাহরিয়ার (০), পিয়েরে কোটজে (৮ রান), সাব্বির রহমান (১০ রান), থিসারা পেরেরা (০), মোসাদ্দেক হোসেন (১১ রান), ফরমানউল্লাহ (২২ রান), চতুরঙ্গ ডি সিলভা (১ রান) এবং আবু জায়েদ (১ রান) অল্প রানেই আউট হন। তবে এক পাশে পাহাড়ের মতোই অটল হয়ে ছিলেন তানজিদ হাসান। তিনি ২টি চার ও ৪টি ছক্কার মারে ৬২ রান করেন ৪৪ বলে। ইনিংসের শেষদিকে তাঁকে শিকার করেন ফাহিম আশরাফ। ফাহিম ২টি উইকেট শিকার করেন ২৩ রান দিয়ে। এ ছাড়াও তানভির ইসলাম ৩টি এবং জাহানদাদ, রিপন ও মাহমুদুল্লাহ ১টি করে উইকেট শিকার করেন। ছোট তামিমের পর সাগরিকায় শুরু হয় বড় তামিমের ব্যাটিং ঝড়। তামিম ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬১ রানের ইনিংসটি সাজান। ফরচুন বরিশালের অপর ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত ২ রানে আউট হলেও দলটির জয় পেতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ডেবিড মালান ৪১ বলে ৪৯ রান করেন ৩টি চার ও ১টি ছক্কার মারে। শেষদিকে ৪ বলে ১৩ রান করেন জাহানদাদ। ম্যাচের পর ঢাকা ক্যাপিটালসের অধিনায়ক থিসারা পেরেরা বলেছেন, ১৬০/১৭০ রান হলে ম্যাচে লড়াই সম্ভব ছিল। অবশ্য এখনো জয়ে ফিরে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার আশা করেন থিসারা পেরেরা। দল হিসেবে ঢাকা ক্যাপিটালস তলানিতে থাকলেও ব্যাটার হিসেবে শীর্ষে আছেন তানজিদ হাসান তামিম। তিনি ৮ ম্যাচে ৩০৮ রান করেছেন। এখনো চারটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন। রানের সংখ্যা আরও অনেক বাড়িয়ে নিতে পারবেন তিনি। রানের দিক দিয়ে তামিম ইকবালও খুব পিছিয়ে নেই। তিনি ৬ ম্যাচে করেছেন ২২২ রান। বিপিএলের ইতিহাসে তামিম ৩০টি হাফসেঞ্চুরির পাশাপাশি ২টি সেঞ্চুরি করেছেন। এই তালিকায় তিনিই সবার ওপরে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ঢাকা ক্যাপিটালস : ১৯.৩ ওভারে ১৩৯ (তানজিদ ৬২, লিটন ১৩, মোসাদ্দেক ১১, শাফি ২২; জাহান্দাদ ৩.৩-০-১৫-১, রিপন ৪-০-২৭-১, ফাহিম ৪-০-২৩-২, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-৩৯-৩)
ফরচুন বরিশাল : ১৬ ওভারে ১৪৫/২ (তামিম ৬১, মালান ৪৯*, জাহান্দাদ ১৩*; মুস্তাফিজ ২-০-১৪-০, আবু জায়েদ ৩-০-২৮-১, শাফি ২-০-১৭-০, পেরেরা ৩-০-২৫-১)
ফলাফল : ফরচুন বরিশাল ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা : তামিম ইকবাল