পুরুষ ফুটবলে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক দলে কোনো পরিবর্তন নেই। প্রবাসীতেও সেই রুগ্ন চেহারা। ইংল্যান্ড প্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরী জাতীয় দলে নাম লেখানোর পর প্রত্যাশা ছিল ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। কিন্তু হামজা খেলার পরও এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে হারটা যেখানে অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল, সেখানে তাদের মাটিতে ড্র করাটাও কম স্বস্তি নয়। তবে হামজা থাকার পরও কেন জিতবে না এ ক্ষোভ তো ফুটবলপ্রেমীদের ছিল। ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের অভিষেক। অনেক তারকাই দেখা মিলেছে। তারপরও হামজাই সেরা কালেকশন। ইংলিশ প্রিমিয়ারের কোনো ফুটবলার জাতীয় দলে খেলবেন তা তো স্বপ্নই ছিল। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হওয়ার খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দ্বিতীয় ম্যাচে শুধু হামজা নন, ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন কানাডা জাতীয় দলে খেলা সামিত সোম, ইতালি প্রবাসী ফাহমিদুল ইসলামও। ইনজুরিতে না থাকলে সামিত ২০২২ সালে কানাডার হয়ে বিশ্বকাপও খেলতেন। তিনি যে কত উঁচুমানের খেলোয়াড় এতেই প্রমাণ মেলে। তিন প্রবাসী খেলার পরও ঘরের মাঠে হেরে গেল সিঙ্গাপুরের কাছে। দুই ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট হারালেও এখনো এশিয়ান কাপে চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন টিকে আছে। গ্রুপের চার ম্যাচ বাকি হংকং দুই ও ভারত আর সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে একটি করে। কঠিন লড়াই, যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তো বলাবলি হবেই ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রবাসীদের খেলিয়ে লাভ হলো কী?
জাতীয় দলের পর অনূর্ধ্ব-২৩ দলেও প্রবাসীর ছড়াছড়ি। এএফসি বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে ভিয়েতনামের বিপক্ষে কিউবা মিচেল ও জায়ান আহমেদ বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। তারপরও মাঠে বাংলাদেশের যুবারা ছিল বড্ড অসহায়। ফল ছিল ০-২, গোলরক্ষক শ্রাবণের দৃঢ়তার ব্যবধানটা বড় হয়নি। গোলরক্ষক এতটা ভালো খেলেছেন যে, শ্রাবণ ম্যাচসেরা পুরস্কার জিতেছেন। জায়ানের পারফরম্যান্সও চোখে পড়েছিল। কিন্তু মিচেল যে ম্যাচে আছেন তা মনেই হচ্ছিল না। মিচেলের পাসপোর্ট ও অন্য কাগজপত্র ঠিক করা হয়েছে মূলত জাতীয় দলে খেলার জন্য। অনূর্ধ্ব-২৩ দলে তার অভিষেকটা সুখকর হয়নি। সত্যি বলতে কি মাঠে নামার আগেই মিচেল যেন তারকা বনে যান। বসুন্ধরা কিংসে নাম লেখানোর পর তাকে ঘিরে ফুটবল অঙ্গনে হইচই পড়ে যায়। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে কিংসে বদলি হিসেবে নেমেও ভালো খেলেছেন। ভিয়েতনামের বিপক্ষে কেন যে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন সেটাই প্রশ্ন।
যাক প্রথম ম্যাচ বলেই হয়তো মিচেল ভালো করতে পারেননি। ইয়েমেনের বিপক্ষে কী করেন সেটাই দেখার বিষয়। ৬ সেপ্টেম্বর মিচেল, জায়ানের সঙ্গে ফাহমিদুলও খেলবেন। অবশ্য চূড়ান্ত দল সাজানোটা কোচের ওপরই নির্ভর করবে। তারপরও ধরে নেওয়া যায় তিন প্রবাসী থাকবেন। হামজাদের আগে প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজী ও কাজিম শাহও জাতীয় দলে খেলেছেন। তাদের নিয়ে কিন্তু এত আলোচনা হয়নি। হামজা, সামিতরা খেলার পর ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা তাদের ফেডারেশনের ওপর ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। তাদের পত্রপত্রিকাতে লেখা হচ্ছে, বাংলাদেশ যদি প্রবাসীদের এনে ফুটবলে উন্নয়ন ঘটাতে পারে। ভারত পারবে না কেন? প্রয়োজনে সরকারি নিয়ম পরিবর্তন করে ভালো মানের প্রবাসী ফুটবলারদের খেলানো উচিত। তা না হলে ভারতের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্রবাসী খেলায় ভারতে হাহাকার চলছে। বাস্তবতা প্রবাসীদের খেলিয়েও তো স্বস্তি মিলছে না। তাহলে লাভ হবে কি? এ ব্যাপারে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক কায়সার হামিদ বলেন, ‘এত অস্থির কেন, রাতারাতি কি সব পাল্টে যাবে। ব্যর্থতা থেকে বের হতে তো সময় লাগবে। প্রবাসীদের নিয়ে বাফুফের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে হবে। আমার বিশ্বাস প্রবাসীতেই মিলবে স্বস্তি।’ জাতীয় দলের আরেক সাবেক ফুটবলার রুম্মন ওয়ালি বিন সাব্বির বলেন, ‘প্রবাসীদের খেলানোটা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে কর্মকর্তাদের গুণগত মানের পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে যত বড় খেলোয়াড় খেলুক না কেন স্বস্তি মিলবে না।’