বাংলাদেশের ফুটবলারদের ফিটনেসে যে অবস্থা ছিল ৯০ মিনিটের ম্যাচে ৪৫ বা প্রথমার্ধেই শেষ। বাকি সময় খেলার দম ছিল না। এ অবস্থা ছিল দীর্ঘ সময় ধরে। ২/৩ বছর ধরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোয় যে গতিময় খেলা খেলছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। হামজা, সামিত, ফাহমিদুল বা জায়ানদের মতো মানসম্পন্ন প্রবাসীরা খেলার পর জাতীয় দলের মান যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো বলা যায়। ৭০ ও ৮০ দশককে তো ফুটবলে সোনালি অধ্যায় বলা হয়। তারকায় ঠাসা ছিল জাতীয় দল। সেই সোনালি সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ এখন অনেক দুরন্ত বা কার্যকর। এমন পারফরম্যান্সের পরও হতাশা কাটছে না। ভালো খেলেও মাঠ ছাড়তে হচ্ছে। বড় জোর ড্র করছে।
হামজারা খেলার পর ফুটবল তো নতুনভাবে জেগেছে। তারপরও জেতা সম্ভব হচ্ছে না কেন? জয়-পরাজয় নিয়েই তো খেলা কিন্তু বাংলাদেশ তো প্রতিপক্ষকে জয় উপহার দিচ্ছে। আগের কথা বাদ দিলাম, এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বেরই কথা বলি। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত গ্রুপের চার ম্যাচ খেলে দুটি ড্র ও দুই ম্যাচে পরাজিত হয়েছে। জয়ের দেখা মেলেনি। অথচ হামজারা প্রতিটি ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছেন। ঢাকায় সিঙ্গাপুর ও হংকং চায়নার কাছে হার কি মানা যায়? তাহলে হারল কেন? এখানে রক্ষণভাগের ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে। সিঙ্গাপুর ও হংকং যে গোলগুলো করেছে তার জন্য দায়ী বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। আক্রমণভাগেরও ব্যর্থতা রয়েছে। কিন্তু ডিফেন্ডারদের খামখেয়ালিপনা চোখে পড়ার মতো।
জাতীয় দলের মতো একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে বসুন্ধরা কিংসের বেলায়। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে গ্রুপের দুই ম্যাচে ওমান ও লেবানন ক্লাবের কাছে হেরে পরবর্তী রাউন্ডে খেলা সম্ভব হচ্ছে না তাদের। আগামীকাল শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে তারা। এখানে জিতলেও লাভ নেই। এবারের এএফসি ফুটবলের মিশন তাদের শেষ হয়ে গেছে। তারপরও শেষটা যদি জয়ে হয় তাতেই তো স্বস্তি। কুয়েতের বিখ্যাত ক্লাবকে হারানোটা হবে বড় প্রাপ্তি। এখন তা কি সম্ভব? সত্যি বলতে কি গোল মিস করলেও কিংসের আক্রমণভাগ ঠিকই প্রতিপক্ষদের কাঁপুনি ধরিয়েছে। রক্ষণভাগের দায়িত্বহীনতায় তারাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে।
দেশের সাবেক স্ট্রাইকার শেখ মো. আসলাম বলেছেন, ‘কিংস ঠিকই আলসিব, আল-আনসারের বিপক্ষে সমান তালে খেলেছে। রক্ষণভাগের ভুলে বা দায়িত্বহীনতায় পরবর্তীতে আক্রমণভাগও ঝিমিয়ে পড়েছে। আলসিবের বিপক্ষে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয়ার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় কিংস। সেই ম্যাচে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছে রক্ষণের ভুলে। আল-আনসারের বিপক্ষে ০-৩ গোলে হারলেও শুরুতে কয়েকবার আক্রমণ করে তাদের দুর্গ কাঁপিয়ে দিয়েছিল কিংস। রক্ষণের এলোমেলো খেলার কারণে চাপ অব্যাহত রাখতে পারেনি। এটাই স্বাভাবিক নিজ দলের ডিফেন্ডারদের ভুলে গোল হজম করলে তখন কি আর স্বাভাবিক খেলা যায়?’ জাতীয় দলের সাবেক নন্দিত ডিফেন্ডার কায়সার হামিদ বলেন, ‘শরীরে যখন রক্তক্ষরণ হয় চিকিৎসক টেস্ট দেন কী কারণে হচ্ছে। ফুটবলে তো আর চেকআপ দরকার নেই। রক্ষণেই যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এ নিয়ে কি সন্দেহ রয়েছে? ঢাকায় হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জালে শেষ বল জড়ানোর পর হামজা দেওয়ান চৌধুরী যেভাবে হতাশ চেহারায় কিছুক্ষণ বসেছিলেন, তা জাতীয় দলের ডিফেন্ডারদের ব্যর্থতায় প্রতীকী চিহ্ন হতে পারে।’
সারা ম্যাচে সমান খেলল আর রক্ষণভাগের সামান্য ভুলেই হার তাহলে আর লাভ হলো কী? রক্ষণভাগে রক্তক্ষরণ কেন যে বন্ধ হচ্ছে না তার কি কোনো চিকিৎসা নেই?’