ম্যাচ শেষে অধিনায়ক লিটন দাস কিছু বলেননি শামীম পাটোয়ারীকে। প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে আউটের পর ধুঁয়ে দিয়েছিলেন বাঁ-হাতি ব্যাটারকে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে গতকালও যাচ্ছেতাইভাবে আউট হয়েছেন শামীম। বলের লাইন-লেন্থ না বুঝে বোল্ড হয়েছেন। শুধু তিনি কেন, নুরুল হাসান সোহানের পরিবর্তে খেলতে নামা জাকের আলি অনীক দুই অঙ্কের রান করেছেন ঠিকই, কিন্তু তার ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে ব্যাটিং করা। ১৫০ রানের টার্গেটে দল যখন একটি জুটির অপেক্ষায়, তখন দুই ক্রিকেটার এতটাই দায়িত্বহীন ব্যাটিং করেছেন যে, ম্যাচটি বাংলাদেশ হেরেছে ১৪ রানে। এ হারে ৩ ম্যাচ টি-২০ সিরিজ হেরে গেছে এক ম্যাচ আগেই। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল ১৬ রানে। আগামীকাল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ। অবশ্য ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। এক ম্যাচ হতে রেখে সিরিজ জিতে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে ক্যারিবীয়রা। গত ডিসেম্বরে নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের মাটিতে এর আগে ২০১৮ সালে সর্বশেষ টি-২০ সিরিজ খেলেছিল দুই দল। সেটা ক্যারিবীয়রাই জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। বাংলাদেশ টানা ৪ সিরিজ জয়ের পর এবার সিরিজ হারল।
প্রথম টি-২০ মাচে ১৬৫ রান করেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল ১৬ রানে। ম্যাচটি জিতেছিল লিটন বাহিনীর বাজে ব্যাটিং ও ক্যারিবীয়দের দুর্দান্ত সব ক্যাচে। গতকাল ১৪৯ রান করে জয় পায় ১৪ রানে। লিটন, সাইফ হাসান, জাকের, তাওহিদ হৃদয়, শামীমদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে ওভার প্রতি ৭.৫০ রান টার্গেটে ৮ উইকেটে ১৩৫ রান করে টাইগাররা। ম্যাচটি ক্যারিবীয়রা জিতেছে মূলত লিটন বাহিনীর বাজে ব্যাটিংয়ে। লিটন জীবন পেয়েও ২৩ রানের বেশি করতে পারেননি। সাইফ ৫, হৃদয় ১২, জাকের ১৮ বলে ১৭, শামীম ২ বলে ১ রান করেন। শামীম সর্বশেষ ১০ ম্যাচের ৪টিতে শূন্য মেরেছেন, একটিতে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৩ রান করেছেন। ক্যারিবীয় ফিল্ডাররা গতকাল ৪টি সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ৪৮ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৬১ রান করেছেন তানজিদ তামিম। এর আগে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ৯ উইকেটে ১৪৯ রান করে। মুস্তাফিজুর রহমান ও নাসুম আহমেদ দুজনে দুবার হ্যাটট্রিকের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। নাসুম ১২তম ওভারে এবং মুস্তাফিজ ২০তম ওভারে সুযোগ দুটি সৃষ্টি করেছিলেন। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনও ভালো বোলিং করেন। মুস্তাফিজের স্পেল ৪-০-২১-৩, নাসুম ৪-০-৩৫-২ ও রিশাদ ৩-০-২০-২। তানজিম উইকেট না পেলেও ভালো বোলিং করেছেন। তার স্পেলের প্রথম বলেই ক্যাচ ছেড়েছেন অধিনায়ক লিটন দাস। তার স্পেল ৪-০-২৩-০। তাসকিনের স্পেল ৩-০-২৮-১। ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারলেও টাইগার অধিনায়ক লিটন ব্যাটারদের কিছুই বলেননি। দুঃখ প্রকাশ করেছেন বোলারদের কাছে, ‘গত ২-৩ সিরিজে আমাদের বোলাররা সত্যিই ভালো করেছে। বোলারদের প্রতি আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তারা আমাদের জন্য অসাধারণ কাজ করেছেন। কিন্তু আমরা ম্যাচ জিততে পারিনি।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ব্যাটিংয়ে ১৪৯ রান করে। ১ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর অ্যালিক অ্যাথানজে ও শাই হোপ ১০৫ রানের জুটি গড়েন। দুজনেই হাফ সেঞ্চুরি করেন। অ্যাথানজে ৩৩ বলে ৫২ ও হোপ ৩৬ লে ৫৫ রান করেন। ১৫০ রানের টার্গেটকে বড় বলেননি টাইগার অধিনায়ক, ‘১৫০ রান মোটেও বড় লক্ষ্য ছিল না। বিশেষ করে চট্টগ্রামে। কিন্তু যখনই আমরা একটু সেট হয়েছি, তখনই আউট হয়ে গেছি। বিশেষ করে আমাকে অন্তত ১২-১৩ ওভার ব্যাট করতে হবে। আমাকেও উন্নতি করতে হবে। কারণ আমি টিকে থাকলে ম্যাচ আগেই শেষ হতে পারত।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১৩৫/৮, ২০ ওভার। (সাইফ ৫, তানজিদ ৬১, হৃদয় ১২, জাকের ১৭, শামীম ১, রিশাদ ০, তানজিম ৮*, নাসুম ২। সিলস ৪-০-৩০-০, হোল্ডার ৪-০-২০-২, শেফার্ড ৪-০-২৯-৩, চেইস ৩-০-১৯-০, আকিল ৪-০-২২-৩, পিয়ের ১-০-১৩-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৪৯/৯, ২০ ওভার। (অ্যাথানেজ ৫২, হোপ ৫৫, চেজ ১৭*, শেফার্ড ১৩। তানজিম ৪-০-২৩-০, তাসকিন ৩-০-২৮-১, মুস্তাফিজ ৪-০-২১-৩, নাসুম ৪-০-৩৫-২, সাইফ ১-০-৯-০, রিশাদ ৩-০-২০-২ শামীম ১-০-১১-০)
ফল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪ রানে জয়ী
সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-০তে এগিয়ে
ম্যাচসেরা : রোমারিও শেফার্ড