পদত্যাগ করে বিসিবিকে বিরাট এক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন শেন জার্গেনসেন। আগাম কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে কেন দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন, এ নিয়ে নানান গুঞ্জন ক্রিকেটপাড়ায়। বিসিবি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি ঠিকই, কিন্তু সঠিক উত্তরও দেয়নি। অবশ্য ক্রিকেটসংশ্লিষ্টরা গত পরশুর বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকের পর স্পষ্টই দেখেই ফেলেছেন জার্গেনসেনের ভবিষ্যৎ। আজ অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকা ফেরার কথা জার্গেনসেনের। ঢাকায় ফিরে তিনি কথা বলবেন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তাতে কি সমস্যার সমাধান হবে? জট ভাঙবে? বোধহয় না। তারপরও বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান জানিয়েছেন, বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দেশে ফেরার পরপরই জার্গেনসেন পদত্যাগের বিষয়টির একটি ফয়সালা হবে। চিকিৎসার জন্য বর্তমানে সিঙ্গাপুর অবস্থান করছেন বিসিবি সভাপতি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট কোচরা কেন থাকতে চান না? এ নিয়ে নানান জনের নানা মত। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, আর্থিক কোনো সমস্যা থাকে না কোচদের। কিন্তু অন্য সমস্যাগুলো তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। আরেকপক্ষ মনে করে, বিদেশি কোচদের ওপর ক্রিকেট কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করেন। এরফলে কোচরা স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন না। এসব কারণেই চুক্তি শেষ করতে পারেন না কোচরা। বিশ্বকাপের আগে জার্গেনসেন হঠাৎ পদত্যাগ করায় বিসিবি এখন ব্যাকফুটে। তবে খুব বেশিদিন এই অবস্থায় থাকছে না বোর্ড। বিসিবি সভাপতি দেশে ফেরার পরই জার্গেনসেনের বিষয়টির সুরাহা হবে জানান ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান আকরাম, 'বিসিবি সভাপতি দেশে না থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি দেশে ফেরার পরপরই আলোচনা হবে বিষয়টি। তখনই একটি ফয়সালা হবে এর।' বিদেশি কোচরা জাতীয় ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নেওয়া শুরু করেন ৮০'র দশকের শেষে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম বিদেশি কোচ পাকিস্তানের ফারুক শেখ। দুই সপ্তাহের জন্য এসেছিলেন তিনি। তবে জাতীয় দলের প্রথম পরিচিত বিদেশি কোচ পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডার মুদাসসর নজর। তিনি মাস খানেক সময় কোচিং করান জাতীয় দলকে। দ্বিতীয় বিদেশি কোচ মহিন্দার অমরনাথ। এই ভারতীয় অলরাউন্ডারের কোচিংয়ে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছিল ১৯৯৪ সালে কেনিয়ায় আইসিসি ট্রফিতে। বিশ্বকাপে উঠতে না পারায় চুক্তির আগে বিদায় নিতে হয়েছিল এই ভারতীয়কে। শোনা যায়, অমরনাথের সঙ্গে একটি মানসিক ঝামেলা ছিল ক্রিকেটারদের। অমরনাথের পর বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ওপেনার গর্ডন গ্রিনিজ। গ্রিনিজের কোচিংয়ে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু সুখকর ছিল না ক্যারিবীয় ক্রিকেটারের বিদায়। গর্ডনের বিদায়ের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নেন দক্ষিণ আফ্রিকার এডি বার্লো। ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত বার্লো কোচ ছিলেন দুই বছর। তার কোচিংয়েই অভিষেক টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। তবে পক্ষাঘাতগ্রস্থ থাকায় তখন ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পালন করেন সারওয়ার ইমরান। বার্লোই প্রথম বিদেশি কোচ যিনি ক্রিকেটারদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। আজও তার সানি্নধ্যের কথা স্মরণ করেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার আকরাম, আমিনুল ইসলাম বুলবুলরা। বার্লোর বিদায়ের পর কোচ হন চ্যাপেল ব্রাদার্সের সবার ছোটজন ট্রেভর চ্যাপেল। এক বছর দায়িত্বে ছিলেন ট্রেভর। সে সময় তার কোচিং মেথড নিয়ে জন্ম নিয়েছিল নানান প্রশ্নের। তিনিও চুক্তি শেষ করতে পারেননি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যর্থ কোচ বলা হয় পাকিস্তানের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার মহসিন কামালকে। ২০০৩ সালে তার কোচিংয়ে চরম লজ্জা পেয়েছিল ক্রিকেট দল কানাডা ও কেনিয়ার কাছে হেরে। মাথা নিচু করেই বিদায় নিতে হয়েছিল কামালকে। প্রথম বিদেশি কোচ হিসেবে পূর্ণ মেয়াদ পালন করেন অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত ডেভ হোয়াটমোর। ২০০৩ দায়িত্ব নিয়ে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের পর সরে দাঁড়ান হোয়াটমোর। এরপর কোচ হন জেমি সিডন্স। তিনিও চার বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর সিডন্সের মেয়াদ বাড়ায়নি বিসিবি। তার বিদায়ে হাফ ছেড়ে বেঁচেছিল বিসিবি। সিডন্সের পর গত তিন বছরে তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। কিন্তু কেউই মেয়াদ পূর্ণ করেননি। সিডন্সের বিদায়ের পর অনেক যাচাই-বাছাই করে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় অস্ট্রেলিয়ার স্টুয়ার্ট ল'র হাতে। মাত্র একটি সিরিজে দায়িত্ব পালন করে পারিবারিক কারণে দেশে ফিরে যান ল। মাত্র চার মাস কাজ করে রিচার্ড পাইবাস। তাদের সহকারী জার্গেনসেনকে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১২ সালে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ পান জার্গেনসেন এবং মেয়াদকাল ছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত।