ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর আবারও লজ্জা পেলেন মুশফিকুর রহিমরা। লজ্জার কালো রংয়ে ঢেকে অপার সৌন্দর্য্যের সেন্ট ভিনসেন্টের কিংসটাউনের আর্নেস ভেলে বাংলাদেশকে ১০ উইকেটের বড় হার উপহার দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এমন বেদনার ও কষ্টের হারের পরও আগামী ১৩-১৭ সেপ্টেম্বর গ্রস আইলেটে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলবে টাইগাররা। অসহায় আত্দসমর্পণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন লড়াইয়ের পরও ভালো কিছুর করার আশায় গ্রস আইলেটে নামবে দল, ম্যাচ হেরে আশাবাদী মানুষের মতোই বলেন মুশফিক। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতি যে দলকে ভারসাম্যহীন করেছে, সেটা জানাতেও ভুল করেননি টাইগার অধিনায়ক।
টানা ১২ ওয়ানডে হারে মানসিক বিপর্যস্ত। তার ওপর গত জানুয়ারির পর টেস্ট বিরতি, সব মিলিয়ে ট্যাকটিক্যালি পিছিয়েই মুশফিকরা। ওয়ানডে সিরিজে টানা হারের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে যখন আরও বিপর্যস্ত, তখনই মুশফিকরা খেলতে নামেন টেস্ট। অথচ কিংসটাউন টেস্টের আগে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টটি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই আত্দবিশ্বাস কোনো কাজেই লাগেনি। টানা ওয়ানডে হার যেভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে দলকে, সেখান থেকে বেরোতে পারেনি টাইগাররা। আর্নেস ভেলে তা আরও স্পষ্ট হয় খেলতে নেমে। হারের ধাক্কায় তালগোল পাকিয়ে ফেলা টিম ম্যানেজমেন্ট টেস্ট একাদশ সাজান তিন স্পেশালিস্ট বোলার দিয়ে। দুই পেসারের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ২৪টি! তাইজুল ইসলামের অভিষেক। এমন একটি দল নিয়ে লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখা অঙ্েিজন মাস্ক ছাড়া হিমালয় ডিঙানোর মতো। এই তিন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে খেলা যে কতটা দুরূহ, সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়েই পরিষ্কার বুঝা গেছে। দুই পেসার আল-আমিন ও রুবেল হোসেন কোনো চাপই ফেলতে পারেননি ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের উপর। তবে আলো ছড়িয়েছেন তাইজুল। বাংলাদেশের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট নেন এই বাঁ হাতি স্পিনার। ১০ উইকেটে হারের ম্যাচের সবচেয়ে প্রাপ্তি তাইজুল বললেন টাইগার অধিনায়ক মুশফিক, 'ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের ওপর কোনো চাপই ফেলতে পারেনি বোলাররা। তারা সাবলীল ব্যাটিং করেন। তার মধ্যেই উজ্জ্বল ছিলেন তাইজুল। অভিষেক টেস্ট খেলতে নামলেও খুবই ভালো বোলিং করেছেন তিনি।' তাইজুল ৪৭ ওভারে ১৩৫ রানে নেন ৫ উইকেট।
প্রতিপক্ষের ৭ উইকেটে ৪৮৪ রানের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেমে যায় মাত্র ১৮২ রানে। মুমিনুল হক (৫১), মুশফিক (৪৮*), শামসুর রহমান শুভ (৩৫) ও শুভাগত হোম (১৬) ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যানই দুই অংকের রান করতে পারেননি। ৩০২ রানে পিছিয়ে থেকে ফলোঅন করে মুশফিকবাহিনী। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় একসময় মনে হয়েছিল ৩১ নম্বর ইনিংস হারটি শুধু সময়সাপেক্ষ। কিন্তু হিমালয়সম দৃঢ়তায় ব্যাটিং করে মুশফিক শুধু সেঞ্চুরিই করেননি, দলকে ইনিংস হারের লজ্জা থেকেও বাঁচান। ১১৬ রানের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তার সেঞ্চুরিতেই ৩১৪ রান করে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে। এই স্কোর গড়ে টাইগাররা পঞ্চম উইকেট জুটিতে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর রেকর্ড ১৩০ রানে ভর করে। মাহমুদুল্লাহ ২১ মাস পর হাফসেঞ্চুরি করেন। ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন তামিমও। এই ইনিংসগুলোই টাইগার অধিনায়ককে গ্রস আইলেটে ভালো খেলার স্বপ্ন দেখাচ্ছে, '৬ মাসের বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলতে নামা সত্যিই কষ্টকর। বিরতিটা আমাদের সমস্যায় ফেলেছে। তারপরও আমি মনে করি দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ কিছু প্রাপ্তি রয়েছে আমাদের। দ্বিতীয় টেস্টে এসব প্রাপ্তি আমাদের ভালো খেলতে উজ্জীবিত করবে।'
প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৮২ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩১৪। অথচ দল সাজানো হয়েছে ৮ ব্যাটসম্যান দিয়ে। বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশই আট ব্যাটসম্যান দিয়ে একাদশ সাজায় না। অথচ বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট সেটা সাজিয়ে হাস্যস্পদে পরিণত হয়েছেন। দুই ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রাপ্তি একটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলার অবশ্য একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক, 'সাকিব না খেলায় তার জায়গা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেটা পূরণ করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে খেললে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানো সম্ভব হয়। কিন্তু বোলিংয়ে সমস্যাটা থাকে না। তার অনুপস্থিতি আমরা টের পেয়েছি।'
ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পরও মুশফিক ড্রয়ের স্বপ্ন নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন আর্নেস ভেলে। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। লজ্জাজনক হারের পরও গ্রস আইলেটে ভালো কিছুর প্রত্যাশা মুশফিকের। এজন্য ৬০০ রান করতে হবেও বলে জানান।