'মুদ্রা' শব্দের অর্থ আনন্দ বা ছাপ। যে ক্রিয়া অভ্যাসে দেহ-মনের পরিপূর্ণ আনন্দ লাভের পাশাপাশি অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়, তাই মুদ্রা। অর্থাৎ সেসব ক্রিয়ার নামই মুদ্রা যা অভ্যাসে দেহ-মনের ওপর এমন ছাপ পড়ে যাতে অটুট স্বাস্থ্যে দেহ-মনের উন্নতি লাভের পথ সুগম হয়।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুদ্রাসনের অনুরূপ হলেও প্রয়োগ-প্রক্রিয়া ও প্রভাবের স্বাতন্ত্র্য বিবেচনায় মুদ্রা ও আসনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। আসন অভ্যাসে আমাদের অস্থি, পেশি ও স্নায়ুতন্ত্রগুলো সুস্থ ও সবল হয়। অন্যদিকে মুদ্রাভ্যাসে বহিঃস্রাবী ও অন্তঃস্রাবী গ্রন্থিসমূহ অধিক কর্মক্ষম ও সুস্থ থাকে। একটা বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট থাকতে হবে যে দৈহিক সুস্থতার জন্য স্নায়ুতন্ত্রের চেয়ে গ্রন্থিসমূহের উপরই আমাদের অধিকতর নির্ভর করতে হয়। কেননা গ্রন্থিগুলোর সবলতা ও কর্মক্ষমতার উপর আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা, সবলতা ও কর্মক্ষমতা নির্ভর করে। তাই আসনচর্চার চেয়ে মুদ্রাচর্চাকে যতই নিরীহ ভাবি না কেন, প্রকৃতপক্ষে মুদ্রাচর্চা আমাদের সুস্থ সবল দেহ-মনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ একটি উপায়।অভ্যাসের প্রকৃতিগতভাবেও আসনের সঙ্গে মুদ্রার উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ধ্যানাসন বা স্বাস্থ্যাসন অভ্যাসকালে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হয়। কিন্তু মুদ্রাভ্যাসকালে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ-বর্জনে বৈচিত্র্য রয়েছে। কখনো হয় তো ধীরে ধীরে দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে হয়। আবার কখনো বা একেবারে দম বন্ধ করে বা ছেড়ে মুদ্রাভ্যাস করতে হয়। তাই মুদ্রাভ্যাসের ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া কিরূপ হবে সে দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা এবং সে অনুযায়ী চর্চা করা আবশ্যক। ঘেরণ্ড-সংহিতার মুদ্রাকথনের তিনটি শ্লোকে পঁচিশটি মুদ্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন- মহামুদ্রা নভোমুদ্রা উড্ডীয়ানাং জালন্ধরম। মূলবন্ধং মহাবন্ধং মহাবেধশ্চ খেচরী। বিপরীতকরণী যোনিবজেলী শক্তিচালনী। তাড়াগী মাণ্ডবী মুদ্রা শাম্ভবী পাঞ্চধারণা। অশ্বিনী পাশিনী কাকী মাতঞ্চী চ ভুজঙ্গিনী। পঞ্চবিংশত মুদ্রানি সিদ্ধিদানীহ যোগীনাম্।এগুলোর মধ্যে সবগুলো মুদ্রাই সবার ক্ষেত্রে অভ্যাসযোগ্য নয়। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে যেসব মুদ্রা সবার জন্য কার্যকরী ও অভ্যাসযোগ্য, আমরা না হয় সেগুলোই চর্চা ও অভ্যাস করব। তবে সাবধানতা এই যে, কেবল যোগমুদ্রা ছাড়া অন্য কোনো মুদ্রা ১২ বছরের কম বয়স্ক ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের করা উচিত হবে না।