স্মরণীয় করে রাখা গেল না ম্যাচটি। অথচ স্মরণীয় করে রাখার সব উপকরণ ছিল কাল। ছিল দৈত্যাকৃতির এমসিজি। ছিল ৫৫ হাজার ক্রিকেটপ্রেমী। সঙ্গে ছিল একরাশ স্বপ্ন। সেমিফাইনালের স্বপ্ন। ফাইনালে খেলার অতি উঁচু স্বপ্ন। কিন্তু সব স্বপ্নের সলিল সমাধি হয় এমসিজির পাড় ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ইয়ারা নদীতে। মাশরাফিদের স্বপ্নের বুকে ছুরি চালিয়ে স্তব্ধ করে দেন দুই আম্পায়ার ইয়ান গুল্ড ও আলিম দার।
দুই আম্পায়ার একটি নয়, তিন-তিনটি বাজে সিদ্ধান্ত দেন। যা ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে। সুরেশ রায়না যখন ১০, তখন লেগ বিফোরের আবেদন করেন মাশরাফি। সাড়া দেননি আলিম দার। রিভিউ দাবি করার পরও তৃতীয় আম্পায়ার নাকচ করে দেন। অথচ টিভি রিপ্লে বলেছে, বলটি আঘাত হানত উইকেটে। এরপর রোহিতের বিপক্ষে। দলীয় ৩৯.৪ ওভারে রুবেলের বলে পুল খেলেন রোহিত। ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ নেন নাসির হোসেন। বিমারের অভিযোগে 'নো' কল করেন আম্পায়ার গুল্ড। অথচ টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, বলটি কোমরের নিচে ছিল। সেই রোহিত শেষ পর্যন্ত সাজঘরে ফিরেন ১২৭ রানে। তৃতীয় বাজে সিদ্ধান্ত ছিল মাহামুদুল্লাহ রিয়াদের বিপক্ষে। মোহাম্মদ শামীর বলে মাহামুদুল্লাহর ক্যাচ যখন শেখর ধাওয়ান ধরেন, দেখা গেছে ধাওয়ানের পা দড়ি স্পর্শ করেছে। অথচ আম্পায়ার শরণাপন্ন হননি তৃতীয় আম্পায়ারের। তাতে শেষ হয়ে যায় একজন ভালো ব্যাটসম্যানের ইনিংস।
আম্পায়ারের এমন বাজে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন আসবে জানতেন টাইগার অধিনায়ক। কিন্তু মাশরাফি সে পথে হাঁটেননি, শুধু বলেছেন মাঠে যা ঘটেছে সবাই দেখেছেন। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। 'যদি রোহিত শর্মা আউট হতেন, তাহলে ম্যাচের চিত্র অন্যরকম হতে পারত। আমরা আগেই জানতাম, ভারতকে হারাতে হলে উইকেট নিতে হবে। আর আম্পায়ারিং নিয়ে আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।' আম্পায়ার নিয়ে কিছু না বললেও ১০৯ রানের বড় হারে হতাশ টাইগার অধিনায়ক, 'আমাদের বোলাররা আজ ভালো বোলিং করেছেন। তবে সেটা আরও ভালো হতে পারত। তাতে হয়তো ২০-৩০ রান কম হতো। ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশীল ব্যাটিং করা উচিত ছিল। এমন বড় হারে আমি হতাশ।'
স্বপ্ন ছিল সেমিফাইনাল খেলার। কিন্তু বাজে আম্পায়ারিং সেটা পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও দিন শেষে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট টাইগার অধিনায়ক, 'আমি মনে করি এবারের বিশ্বকাপ আমাদের সেরা। আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম, সেটা পূরণ হয়েছে শতভাগ। সেমিফাইনাল খেলতে পারলে সেটা আরও ভালো হতো। তারপরও আমি মনে করি বিশ্বকাপ থেকে আমাদের প্রাপ্তি অনেক বেশি। আমরা আত্দবিশ্বাস নিয়ে যাচ্ছি। যা ঘরের মাটিতে বড় সিরিজগুলোতে খুব কাজে লাগবে।' ভবিষ্যতে ক্রিকেট খেলবেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি জানান, ওয়ানডে ক্রিকেটটা খেলে যাবেন। তবে অধিনায়কত্ব নিয়ে তিনি ভাবেন না। তিনি বলেন, 'আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ক্রিকেট খেলতে চাই। অধিনায়কত্ব নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই।'
রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে ৩০২ রান করে ভারত। অথচ শুরুতে ২৫ ওভারে ৯৯ রান ছিল ধোনি বাহিনীর। আম্পায়ারের সুবিধা নিয়ে শেষ ২৫ ওভারে ২০৩ রান যোগ করে ভারত। শেষ ১৫ ওভারে সংগৃহীত স্কোর ১৪৭। এই ১৫ ওভারই ম্যাচের মুহূর্ত ঘুরিয়ে দিয়েছে বলেন মাশরাফি, 'আমরা জানতাম ভারত শেষ ১৫ ওভারে টার্গেট করেছে। তারা সফল। তারা শেষ ১৫ ওভার কাজে লাগিয়েছে। আমাদের উচিত ছিল ভালো বোলিং করা। কিন্তু পারিনি। রোহিত খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। রায়নাও ভালো করেছে। সব মিলিয়ে আমার মনে হয়, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের।'