গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বৃহৎ করদাতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে। ফলে রাজস্ব আয়ে চাপ তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়িক মন্দা বড় কোম্পানিগুলোর ওপর প্রভাব ফেলায় এ ধস নেমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভ্যাট আদায়ে দুর্নীতিও অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তুলনামূলক কম ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হলে প্রশাসনিক সংস্কার ও প্রক্রিয়াগত পরিবর্তন জরুরি। তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাট উইংয়ের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) গত অর্থবছরে ৭৬ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় করেছে, যা আগের বছরের ৭৩ হাজার ৬৬০ কোটির তুলনায় সামান্য বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। ৩৪টি খাতের মধ্যে ২৫টিতে ভ্যাট আদায়ে প্রবৃদ্ধি হলেও ৯টি খাতে পতন দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), পাঁচ তারকা হোটেল, সিরামিক টাইলস, টেলিকম যন্ত্রাংশ, খাদ্যপণ্য, প্যাকেজিং সামগ্রী, কাগজ, পানি সরবরাহ ও সাবান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বৃহৎ করদাতা ইউনিটের ভ্যাট প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের ওপরে ছিল। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এনবিআরের রাজস্ব আদায় বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ২৩ শতাংশ। সবচেয়ে বড় অবদানকারী খাত হিসেবে শীর্ষে রয়েছে তামাকশিল্প। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা ভ্যাট দিয়েছে, যা আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করদাতা খাত হলো চারটি মোবাইল ফোন কোম্পানি দিয়েছে ১১ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। গ্যাস খাত থেকেও এসেছে ১১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা, যা ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। আর ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক দিয়েছে ৩ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি।
ভ্যাট উইংয়ের সাবেক সদস্য ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার পরামর্শ কমিটির সদস্য ফরিদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের ভ্যাট আদায় তামাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। তামাক থেকে সামান্য পতন হলেও পুরো রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই প্রচেষ্টাভিত্তিক ভ্যাট আদায়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের অর্থনীতির ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত ১৬ শতাংশে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ এটি ৭ থেকে ৮ শতাংশেই আটকে আছে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এ প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়।