দিন যাচ্ছে আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিভাগের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কিন্তু বাড়ছে না তাদের আবাসন ব্যবস্থা। তাই তো এ সমস্যার আপাত সমাধানে আট বছর আগে দুটি আবাসিক হলের কাজ শুরু হয়। একই সময়ে কাজ শুরু হয় একটি একাডেমিক ভবন ও একটি শিক্ষক কোয়ার্টারেরও। ২০১৭ সালে নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফা বাড়ানো হলেও গড়ে ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই নির্মাণ কাজ শেষ করা ও এর গুণগত মান নিয়ে সংশয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০১৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন আছে ১০ তলা বিশিষ্ট এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল, শেখ হাসিনা হল, ২০ তলা একাডেমিক ভবন ও ১০ তলা শিক্ষক কোয়ার্টার। (অফিশিয়ালি শেখ হাসিনার নাম পরিবর্তন করা হয়নি) এর মধ্যে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের অডিটোরিয়াম ভবনের সাটারিংসহ ছাদের একাংশ ধসে পড়ে। এরপর কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, সময়সীমা তিন দফা বাড়ানো হলেও আট বছরেও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। নতুন করে মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় শেখ হাসিনা হল, এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল, ১০ তলা শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০ তলা একাডেমিক ভবন, ড্রেন নির্মাণ, শেখ রাসেল মডেল স্কুলসহ (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মডেল স্কুল) বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আনুষঙ্গিক খরচ বিবেচনায় প্রকল্পের সংশোধিত বাজেট পাস হয়। ২০১৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৫১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রকল্পের প্রথম দফা সময়সীমা ছিল ২০২০ সাল। পরে তা বাড়িয়ে ২০২২ সাল করা হয়। দ্বিতীয় দফার সময়সীমা শেষেও কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ধরা হয় ২০২৪ সাল। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের কাজ শেষ হয়েছে ৯৫ ভাগ, শেখ হাসিনা হলের ৬৫ ভাগ এবং একাডেমিক ভবন ও শিক্ষক কোয়ার্টারের কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ ভাগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক এস এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা এই আবাসিক হলে উঠতে পারবে। তিনি আরও জানান, দ্রুত ভবন নির্মাণ ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা কামারুজ্জামান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ সাকিব রায়হান হল’ এবং শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ করার দাবি জানান। তবে এই নাম পরিবর্তনের বিষয়টি এখনো সিন্ডিকেটে পাস হয়নি।