অধরাই থাকল দেশের ভাসমান মানুষের আবাসন। ফুটপাত, পার্ক, ফুটওভার ব্রিজ ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবনযাপন করছে ২২ হাজার, বস্তিতে বসবাস ১৮ লক্ষাধিক মানুষের।
নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার আবাসন, হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আবাসনের চরম সংকটে থাকা মানুষগুলো এর কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার উল্লেখযোগ্য আবাসন তৈরি করতে পারেনি। কয়েকটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তদের কাছে চলে গেছে। তিনি বলেন- শহরে জায়গা না থাকলে শহরের উপকণ্ঠে আবাসন গড়া যায়। শুধু রাজধানী নয়, বিভাগীয় ও জেলা শহরেও আবাসন গড়ে তোলা উচিত। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমেও এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আজ বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা, নগর সমস্যায় সাড়া’। দেশজুড়ে দিবস উদ্যাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে।
পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের লবিতে প্রদর্শনী হবে। এতে রিহ্যাব, রাজউক, স্থাপত্য, নগর পরিকল্পনাসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা আবাসন ও নির্মাণ খাতের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে। বিশ্ব বসতি দিবসের প্রতিপাদ্য ও সবার জন্য আবাসন বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজ, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান।
বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩৫টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্লট ও ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করেছে সরকার। প্লটের সংখ্যা ৫ হাজার ৯০ ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা ২ হাজার ৪৫৯টি। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ১৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। রাজউক উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ৭ দশমিক ৮২ একর জায়গায় আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ছয় তলাবিশিষ্ট ছয়টি আবাসিক ভবনে ৫৯২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। একটি পার্ক ও তিনটি খেলার মাঠ থাকছে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে জুন ২০৩০ সাল। জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে অক্টোবরের প্রথম সোমবার দিবসটি পালন করা হচ্ছে।