আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার ৭ অক্টোবর, ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করতে যাচ্ছে এল সালভাদর। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিটকয়েনকে বৈধ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে দেশটি। প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলের দাবি, এই সিদ্ধান্তে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে কোটি কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। কারণ প্রচলিত ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলো অর্থ পাঠানোর সময় উচ্চ কমিশন কেটে রাখে। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স জানিয়েছে, এখনো দেশটির বড় অংশ এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে।
গত বছর প্রবাসী সালভাদরবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের মোট জিডিপির ২৩ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট বুকেলের হিসাব অনুযায়ী, বিটকয়েন ব্যবহারে বছরে প্রায় ৪০ কোটি ডলার কমিশন সাশ্রয় সম্ভব।
তবে বাস্তবে অনেকে এখনো ডিজিটাল মুদ্রার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এল সালভাদর দীর্ঘদিন ধরে ডলারভিত্তিক অর্থনীতি পরিচালনা করছে (২০০১ সাল থেকে), অর্থাৎ দেশটির সরকারি মুদ্রা মার্কিন ডলার। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশ থেকে অর্থ পাঠানোর সময় রূপান্তর ফি বা অতিরিক্ত খরচ নেই।
বিশ্বব্যাংকের আরও তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এল সালভাদরে অর্থ পাঠাতে গড়ে ২–৩ শতাংশ কমিশন লাগে, যেখানে লাতিন আমেরিকার অন্য দেশগুলোতে এই হার ৬–৮ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ সালভাদরে রেমিট্যান্স পাঠানো তুলনামূলকভাবে সহজ ও কম ব্যয়বহুল।
তবুও প্রেসিডেন্ট বুকেলের যুক্তি—বিটকয়েন লেনদেন কমিশন খরচ আরও কমাতে পারে এবং অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ তৈরি করবে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বনাম প্রযুক্তিগত বাধা
দেশটির মাত্র ৩০ শতাংশ নাগরিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। তাই অনেকেই মনে করছেন, বিটকয়েন ব্যবহার করলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে। তবে ২০২০ সালের এক জরিপে দেখা যায়, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের মধ্যে এল সালভাদরের ইন্টারনেট ব্যবহার হার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, যা বিটকয়েন লেনদেনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির একটি বড় সমালোচনা—এর উচ্চ বিদ্যুৎ খরচ ও কার্বন নির্গমন। ব্যাংক অব আমেরিকা জানিয়েছে, বিটকয়েন খাতে বছরে ৬ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসৃত হয়, যা প্রায় ৯০ লাখ গাড়ির নির্গমনের সমান।
এই সমালোচনার জবাবে প্রেসিডেন্ট বুকেলে বলেন, তিনি রাষ্ট্রীয় **ভূতাপীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি ‘লাজিও’**কে আগ্নেয়গিরির শক্তি ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব বিটকয়েন মাইনিং প্রকল্পের নির্দেশ দিয়েছেন।
নিয়ন্ত্রক ও আর্থিক ঝুঁকি
বিটকয়েনের উন্মুক্ত লেনদেন নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিচ ও আইএমএফ সতর্ক করেছে। তাদের মতে, এতে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও ট্যাক্স ফাঁকির ঝুঁকি বাড়তে পারে।
ফিচ জানিয়েছে, পুঁজিলাভে কর না থাকায় ও বিটকয়েনে ট্যাক্স পরিশোধের সুযোগ থাকলে অবৈধ অর্থপ্রবাহের আশঙ্কা থাকে। ফলে ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিস ইতিমধ্যে এল সালভাদরের ক্রেডিট রেটিং কমিয়ে দিয়েছে, যার প্রভাবে দেশের ডলার বন্ডে চাপ বেড়েছে।
বিটকয়েন ও ডলারের রূপান্তর সহজ করতে দেশটির সরকার ১৫ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছে। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য অস্থিরতা অর্থনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এক দিনে এর দাম শত শত ডলার ওঠানামা করতে পারে। এ অবস্থায় বীমা কোম্পানি ও ব্যাংক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে ফিচ।
তারপরও এল সালভাদরের উপকূলীয় শহর এল জোন্টে ইতিমধ্যে বিটকয়েন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা বলছে, প্রযুক্তিগত বাধা না থাকলে এটি বিদেশি আয় ও বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
সূত্রঃ গ্লোবাল ইকোনমিক্স
বিডি প্রতিদিন/আশিক