গত ১০০ বছরে ঘটে যাওয়া ১০টি সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিল ২০২৩ সালের তুরস্ক-সিরিয়ায় এক সাথে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি। ওই বছরেরর ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের সিরিজটিকে এই অঞ্চলের জন্য শতাব্দীর সেরা দুর্যোগ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ৭.৭ এবং ৭.৬ মাত্রার এই জোড়া কম্পন তুরস্কের ১১টি দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং উত্তর সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। এদের মধ্যে তুরস্কেই মারা যায় ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ।
কিন্তু এই শতাব্দীর ধ্বংসলীলা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই।
তালিকার শীর্ষে রয়েছে ১৯৭৬ সালের চীনের তাংশান শহরের কাছে আঘাত হানা ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প। যদিও চীনা কর্তৃপক্ষ নিহতের সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার বলে জানায়। তবে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের মতে এই সংখ্যা ৭ লাখ পর্যন্ত হতে পারে, যা এটিকে মানব ইতিহাসের দ্বিতীয় মারাত্মক ভূমিকম্পে পরিণত করবে।
এরপরেই আসে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরের ঘটনা। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূলের কাছে আঘাত হানা ৯.১ মাত্রার বিশাল ভূমিকম্পের কারণে ভয়াবহ সুনামি দেখা দেয়। এই দুর্যোগে সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যান। যার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায়ই ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার। ৩০ মিটার উঁচু ঢেউ ঘণ্টায় ৭০০ কিলোমিটার বেগে সবকিছু গ্রাস করেছিল।
২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্স এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে ধ্বংস করে দেয়। এই ঘটনায় ২ লাখের বেশি মানুষ নিহত হন এবং ১৫ লাখ মানুষ গৃহহীন হন।
১৯২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাপানের কান্টোতে আঘাত হানা ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্প ও তার ফলে সৃষ্ট আগুনে ১ লাখ ৪২ হাজরেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এতে টোকিও শহর প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
১৯৪৮ সালের ৫ অক্টোবর তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশগাবাত এবং এর আশেপাশে ৭.৩ মাত্রার এক ভূমিকম্পে কমপক্ষে ১,১০,০০০ মানুষ নিহত হন।
২০০৮ সালের ১২ মে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম সিচুয়ান প্রদেশে আঘাত হানা ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ৮৭ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যান বা নিখোঁজ হন। এর মধ্যে স্কুল ভবনের নিম্নমানের নির্মাণ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
২০০৫ সালের ৮ অক্টোবরের ভূমিকম্পে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ৭৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন এবং ৩৫ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
১৯৩২ সালের ২৫ ডিসেম্বর চীনের উত্তর-পশ্চিম গানসু প্রদেশে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারান।
১৯৭০ সালের ৩১ মে পেরুর উত্তর উপকূলে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ৬৭ হাজারেরও মতো মানুষ মারা যান, যেখানে হুয়ারাজ শহরটি ভূমিধসের কবলে পড়ে চাপা পড়েছিল।
এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলির প্রতিটিই বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির সামনে মানুষের অসহায়ত্ব এবং উন্নত ভূমিকম্প-সহনশীল অবকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা।
সূত্র: টিআরটি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল