মহাকাশের দিকে তাকালে মাঝে মাঝে মনে হয়—আমরা যেন এক বিশাল অজানার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ করেই কোনো অচেনা বস্তু সৌরজগতের ভেতরে ঢুকে পৃথিবীজুড়ে কৌতূহল সৃষ্টি করে। ঠিক এমনই এক রহস্যময় আগন্তুক হলো আন্তঃমহাজাগতিক ধূমকেতু 3I/ATLAS। নাসা বহু প্রতীক্ষার পর এই ধূমকেতুর নতুন ছবি ও তথ্য প্রকাশ করেছে।
এটি সৌরজগতের বাইরে অন্য একটি নক্ষত্রমণ্ডল থেকে এসেছে। এর আগে মাত্র দুটি আন্তঃমহাজাগতিক বস্তু—‘ওউমুয়ামুয়া’ (২০১৭) এবং ‘২আই/বরিসভ’ (২০১৯)—সৌরজগতে প্রবেশ করেছিল। তাই 3I/ATLAS–কে ঘিরে আগ্রহ ছিল তুঙ্গে।
সামাজিকমাধ্যমে কেউ কেউ এটিকে ‘ভিনগ্রহী প্রযুক্তি’ বলেও দাবি তুলেছিল। যদিও নাসা এসব গুজব উড়িয়ে দিয়েছে। ধূমকেতুটি আবিষ্কারের পর নাসার প্রায় ১২টি মহাকাশযান এর দিকে তাকিয়ে ছিল। ফলে সৌরজগত প্রায় এক বিশাল মানমন্দিরে পরিণত হয়। সরকারের ছয় সপ্তাহের শাটডাউনের কারণে ছবি প্রকাশে দেরি হয়।
নাসার তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলগ্রহে থাকা মিশনগুলো ধূমকেতুর সবচেয়ে কাছের ছবি তুলেছে। পারসেভিয়ারেন্স রোভার, মাভেন এবং মার্স রিকনাইসান্স অরবিটার (HiRISE ক্যামেরা) অক্টোবরের শুরুতে এর ছবি পাঠায়।
সূর্য পর্যবেক্ষণকারী মিশন—স্টেরিও, SOHO এবং PUNCH—সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে ধূমকেতুকে বিভিন্ন দিক থেকে ধারণ করে। এছাড়া নাসার লুসি, সাইক মহাকাশযান ও হাবল, জেমস ওয়েব দূরবীক্ষণ যন্ত্রও ধূমকেতুটিকে পর্যবেক্ষণ করেছে।
ধূমকেতুর গতি ঘণ্টায় ৩০ হাজার মাইল, যা সৌরজগতের পরিচিত ধূমকেতুগুলোর তুলনায় বেশি। এটি কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও পানি বরফে সমৃদ্ধ। এমনকি এতে নিকেল উপাদানের উপস্থিতির ইঙ্গিত মিলেছে, যা 2I/Borisov–এর সঙ্গেও মিল রয়েছে। ধূমকেতুর আকার এখনও স্পষ্ট নয়, অনুমান করা হচ্ছে এটি কয়েকশ মিটার থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
নাসা জানিয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর ধূমকেতুটি পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে। যদিও তখনও দূরত্ব থাকবে প্রায় ১৭ কোটি মাইল, যা পৃথিবী–সূর্যের দূরত্বের প্রায় দ্বিগুণ।
বিজ্ঞানীদের মতে, 3I/ATLAS আমাদের জন্য বিরল সুযোগ। সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা উপাদান কাছ থেকে বোঝার একটি বিরল জানালা।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল