চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসক পরিচয় দিতেন হাদিউজ্জামান। খুলনার ফুলতলা থানার ছাতিয়ানী গ্রামের বাসিন্দা হাদিউজ্জামান এইচএসসি পাস করে আর লেখাপড়া করেননি। নিরীহ মানুষের যৌনাঙ্গ কেটে হিজড়ায় রূপান্তর ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় ফুলতলা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে হাতেখড়ি হাদিউজ্জামান গত ১০-১২ বছরে ৪০০-৫০০ লোকের যৌনাঙ্গ কেটে হিজড়ায় রূপান্তর করেন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই কাজ বাস্তবায়ন করা হতো। হিজড়া নামধারী অনেক হিজড়া এবং বেশ কিছু চিকিৎসক এই সিন্ডিকেটের সদস্য। সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে এবং জিম্মি করে হিজড়ায় রূপান্তর করে হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের ১ জুন ঢাকার আশুলিয়ার এনায়েতপুরে রাকিব হাসান শাওনকে হত্যার অভিযোগে তৃতীয় লিঙ্গের চম্পা ওরফে স্বপ্নাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই ঢাকা জেলা। স্বপ্না ছিলেন পুরুষ। নাম ছিল নওশাদ। ১২ বছরের এক ছেলেও রয়েছে তার। ১১ বছর আগে স্ত্রীর মৃত্যুর পর আর্থিক অনটনে জীবন কাটে তার। দেলু হিজড়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় নওশাদের। তার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে নিজেকে পরিবর্তন করে চম্পা ওরফে স্বপ্না হিজড়া বনে যান। এরপর স্বপ্না প্রেমের সম্পর্ক গড়েন রাকিবের সঙ্গে। একপর্যায়ে স্বপ্না রাকিবকে নিয়ে আশুলিয়ার এনায়েতপুরে থাকতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। কলহের জেরে রাকিবকে খুন করেন স্বপ্না। এর দুই বছর পর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হিজড়া পল্লী থেকে স্বপ্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন দিনের রিমান্ডে বেরিয়ে আসে লিঙ্গ পরিবর্তনকারী হিজড়া চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই কাজে সহযোগিতা করছে এক গ্রাম্য পল্লি চিকিৎসক। তার নাম ইহাদ লস্কর। গ্রেপ্তার করা হয় তাকেও। চক্রের সদস্য দেলু হিজড়া ও রাশেদ আহম্মেদ নাসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। চিকিৎসক হাদিউজ্জামান ও ইহাদ লস্কর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর পিবিআই ঢাকা জেলার এসআই সালে ইমরান বাদী হয়ে ঢাকার ধামরাই থানায় হাদিউজ্জামান ও ইহাদ লস্করের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। পিবিআই ঢাকার জেলার দুই কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। তদন্তে উঠে আসে এই অপরাধে জড়িত ছয় চিকিৎসকের নাম। এ ছাড়া দেলু হিজড়া ও রাশেদের নাম তদন্তে উঠে আসে। হাদিউজ্জামানের কাজ থেকে এই কাজ শিখে ইহাদ লস্কর। তার গ্রামের বাড়ি যশোর সদরের জয়রামপুরে। সেখানে রহমত মেডিকেল হল নামে একটি ফার্মেসি গড়ে তোলেন।