আল কোরআন অবমাননার অভিযোগে অপূর্ব পাল নামে রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীকে গণধোলাই দিয়েছে স্থানীয় জনতা। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের এই শিক্ষার্থীর কোরআন অবমাননার ঘটনা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শনিবার রাতে ভাটারায় অপূর্বর বাসার সামনে জড়ো হয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ওই শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজিত জনতা তাকে ধোলাই দেয়। অতিরিক্ত পুলিশ এসে আহত অপূর্বকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে। জনতাকে শান্ত করতে রাতেই ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ অপূর্ব পালকে গতকাল আদালতে হাজির করলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। ওই শিক্ষার্থীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এদিকে গতকালই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাস থেকে ওই শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে।
ভাটারা থানার ওসি মো. রাকিব উদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপূর্ব অপরাধ স্বীকার করেছেন। আমাদের জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত তিনি অনেক ধর্ম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কোনো ধর্মেই তার কাক্সিক্ষত আদর্শ খুঁজে পাননি। এজন্য ক্ষোভ থেকে এ কা ঘটিয়েছেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই মো. চাঁদ আলী অপূর্ব পালকে গতকাল আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামানের আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আটক রাখার আবেদনে বলা হয়, ‘আসামি কোরআন অবমাননার সঙ্গে জড়িত মর্মে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে অপূর্ব পাল স্বীকার করেছেন তিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরিফ হাত থেকে ফ্লোরে ফেলে পা দিয়ে পদদলিত করে ধর্মীয় বিশ্বাসের অবমাননা করেছেন। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে পরবর্তীতে আসামিকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তাকে কারাগারে আটক রাখা জরুরি।’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অপূর্ব নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগেও তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় বিভাগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার ছিলেন। এবার তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।
জানা যায়, শনিবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অন্য শিক্ষার্থীরা অপূর্ব পালকে ক্যাম্পাসে পবিত্র কোরআন অবমাননারত অবস্থায় দেখতে পান। অনেকে তা ভিডিও করেন। এ সময় ক্যাম্পাসে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা বিভাগ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাতে ফেসবুকে ইউনিভার্সিটিতে কোরআন অবমাননা করার কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হলে অপূর্ব পালের বাসার সামনে উত্তেজিত জনতা জড়ো হতে থাকে। দাবি ওঠে গ্রেপ্তার ও বিচারের। খবর পেয়ে ভাটারা থানা পুলিশ গিয়ে জনতাকে শান্ত করে তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন উত্তেজিত জনতা পুলিশের ওপরও চড়াও হয় এবং অপূর্বকে মারধর শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপর আহত অবস্থায় অপূর্ব পালকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।