মাদ্রিদ রাজাদের শহর। বার্সেলোনা জনসাধারণের। বার্সেলোনা স্পেনের যে রাজ্যের রাজধানী সেই কাতালোনিয়া বারবারই স্পেনের অধীনতা খর্ব করে স্বাধীন হতে চেয়েছে। কিন্ত মাদ্রিদের শাসকরা তাদের সেই স্বাধীনতার দাবিকে কোনভাবেই মেনে নেননি। ফলে বেড়েছে দন্দ্ব। সেই দন্দ্ব এবার রূপ নিয়েছে গণভোটের।
যদিও মাদ্রিদের শাসকরা বলছেন, এই গণভোট অবৈধ। সেই গণভোট নিয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের সামনে কেঁদে ফেললেন 'কাতালান' জেরার্ড পিকে।
কাতালুনিয়ার স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বরাবরই সোচ্চার পিকে। এ নিয়ে স্পেনের ভক্তদের কাছে খুব একটা জনপ্রিয় নন তিনি। কাতালোনিয়ার স্বাধীন হলে কোথায় খেলবে বার্সেলোনা, সেটা এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। গতকাল লাস পালমাসের বিপক্ষে ম্যাচের পর পিকে অশ্রুভেজা চোখে বলেছেন স্পেনের ফুটবল ফেডারেশন যদি চায় তাহলে জাতীয় দল থেকে সরে দাঁড়াবেন তিনি।
তিনি আরও বলেছেন, 'পেশাদার ফুটবলার হিসেবে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা ছিল। ম্যাচটা হবে কিনা সেটা ঠিক ছিল না। শেষ পর্যন্ত অনেক আলোচনার পর আমরা খেলতে নেমেছি। আমি কাতালান জনগণকে নিয়ে গর্বিত। আমি নিজেও কাতালান। তারা সব সময়ই আমাদের সমর্থন যুগিয়েছে। তবে যেভাবে পুলিশের কাতালানদের উপর অত্যাচার করেছে সেটা আমি মেনে নিতে পারছি না। তাই এই ঘটনার পর নিজেকে আরও বেশি কাতালান মনে হচ্ছে।
২০১৮ বিশ্বকাপের পরে অবসর নেবেন এটা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন পিকে। তবে চলমান স্পেন-কাতালান দ্বন্দ্বের কারণে আগেই অবসর নিতে পারেন পিকে। সেটার আভাষ দিলেন এদিন।
লাস পালমাস ম্যাচের পর তিনি বলেন, যদি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কোনো পরিচালক কিংবা অন্য কেউ মনে করে আমি স্পেনের ফুটবল ফেডারেশনের জন্য সমস্যা, তাহলে আগামী বিশ্বকাপের আগেই সরে দাঁড়াবো। তবে একটা কথা বলতে চাই জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা সব সময়ই আমার জন্য গর্বের বিষয় ছিল।
আসলে খেলার সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র নতুন কিছু নয়। সভ্যতার আদিকাল থেকেই ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে খেলাকে। এখন যেমন বার্সার স্টেডিয়ামে ব্যানার দেখতে পাওয়া যায় 'উই আর নট স্পেন', তখনও এই দুই অঞ্চলের মানুষদের এই একই মনোভাব বজায় ছিল।
তারা স্বায়ত্বশাসন চেয়েছিল, স্পেন থেকে আলাদা হতে চেয়েছিল। আর এটাই মেনে নিতে পারেননি ফ্রাঙ্কো। তাই তিনি ঠিক করলেন, কোন আঞ্চলিক আন্দোলন বেড়ে উঠতে দেওয়া যাবে না, স্পেনে রাজত্ব থাকবে শুধু ক্যালিস্টদের। সবাইকে কথাও বলতে হবে ক্যালিস্টদের ভাষাতেই। আর এটাই গায়ে লাগল স্বাধীনতাকামী কাতালানদের। আইন করে যখন নিজস্ব ভাষায় কথা বলা বন্ধ করে দিলেন ফ্রাঙ্কো।
তার স্বৈরশাসনের পর থেকে কাতালোনিয়ার জাতীয়তাবাদ আবার শক্তিশালী হতে শুরু করে। তীব্র আন্দোলনের মুখে কাতালান অঞ্চলকে স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আর সেটা করা হয় ১৯৭৮ সালের সংবিধানের আওতায়। স্পেনের সংসদে ২০০৬ সালে একটি আইন প্রণয়ন করা হয় যেখানে কাতালোনিয়াকে আরও কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়।
কাতালানদের উল্লেখ করা হয় একটি 'জাতি' হিসেবে। কিন্তু সংবিধানে কাতালোনিয়াকে দেওয়া এরকম অনেক ক্ষমতা পরে স্পেনের সাংবিধানিক আদালত বাতিল করে দেয় যা কাতালোনিয়ার স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সেজন্য ২০১৫ কাতালোনিয়ার নির্বাচনে জয়লাভ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এমন একটি গণভোট আয়োজনের কথা বলে যার আইনি বৈধতা থাকবে এবং সেটা মানতে মাদ্রিদের সরকার বাধ্য হবে। তবে তাদের দাবি মেনে নেয়নি শাসকরা। সেই দন্দ্বই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সূত্র: কলকাতা২৪.কম
বিডি প্রতিদিন/০২ অক্টোবর ২০১৭/আরাফাত