সারি সারি বাস রাখা। দিন-রাত চলছে যাত্রী ওঠানামা। হাঁকডাকে সকাল থেকে রাত অব্দি ভিড় লেগে থাকছে। রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখল করে রাখা হচ্ছে বাস। এর ফলে এলাকাজুড়ে যানজট লেগেই থাকে। শুধু তাই নয়, ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখল করে কোথাও ভাতের হোটেল, কোথাও ঘোড়ার আস্তাবল তৈরি করা হয়েছে।
শুধু এই ফ্লাইওভার নয়, রাজধানীর অধিকাংশ ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখল হয়ে গেছে। সবার চোখের সামনে এ দখল বাণিজ্য চললেও উদ্ধারে নেই উদ্যোগ। গতকাল সরেজমিনে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচে গিয়ে দেখা যায়, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, বাস দিয়ে ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা থেকে শুরু করে রাস্তা পর্যন্ত দখল করে রাখা হয়েছে। পাশেই চলছে গাড়ি মেরামত, ধোয়া-মোছার কাজ। এর ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করছে যানবাহন। ফ্লাইওভারের কুড়িল, পূর্বাচল প্রান্তের পুরোটাই চা স্টল আর গাড়ির গ্যারেজে পরিণত হয়েছে। এর ফলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কুড়িল মোড়ে লেগে থাকে যানজট।
কুড়াতলি এলাকার বাসিন্দা কবিরুল ইসলাম বলেন, এই ফ্লাইওভার তৈরির কিছুদিন পরেই শুরু হয়ে যায় নিচের ফাঁকা জায়গা দখলের তোড়জোড়। এজন্য এলাকাবাসী অনেকবার কাউন্সিলরকে জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশনে জানিয়েছে, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। ফ্লাইওভারের নিচের ফাঁকা জায়গা থেকে শুরু করে রাস্তার মাঝ বরাবর পর্যন্ত বাস, কাভার্ড ভ্যান রেখে দেওয়া হয়। এখানেই গাড়ি মেরামত, ধোয়া-মোছা, রং করার কাজ চলে। ফলে এ পথে যাতায়াতকারী যাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
এই ফ্লাইওভারের নিকুঞ্জের পাশের অংশের অবস্থা আরও সঙ্গিন। মলমূত্রের দুর্গন্ধে এ পথে যাতায়াতকারী মানুষকে নাকে কাপড় চেপে যাতায়াত করতে হয়। ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা গাড়ি পার্কিং, দোকানপাট, ঘরবাড়ি, ভাসমান লোকদের আড্ডায় আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণতি হয়েছে এসব জায়গা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভিতরে রাস্তার ওপর প্রায় ২৯ কিলোমিটারজুড়ে থাকা ৭টি ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা নিয়ে যেন ভাবনা নেই কারও। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রাক-সমীক্ষা এবং পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনায় বেশ দুর্বলতার কারণে মূল্যবান এসব জায়গা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সরেজমিনে রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচের ফাঁকা জায়গা দখল করে ভাতের হোটেল, গাড়ির গ্যারেজ, কুঁড়েঘর তৈরি করে চলছে ভাড়া খাটানোর জমজমাট ব্যবসা। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মাদকসেবী, ছিন্নমূল মানুষের আস্তানা আর ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই ফ্লাইওভারের নিচের খালি জায়গা। মালিবাগ রেলগেট ও রাজারবাগে বেশ কয়েকটি বাসের কাউন্টার ঘিরে তৈরি হয় যানজট।
খিলগাঁও ফ্লাইওভারটি উত্তরে নেমেছে খিলগাঁওয়ে, দক্ষিণে বাসাবো আর পশ্চিমে নেমেছে শাহজাহানপুরে। ফ্লাইওভারের নিচের ফাঁকা জায়গার কোনো অংশই আর ফাঁকা নেই অবৈধ দখলদারদের কারণে। কেউ বসিয়েছেন দোকান, কেউ বোঝাই করে রেখেছেন ফার্নিচার, মুরগি পরিবহনের খাঁচা, লেপ-তোশক, স্টিলের দোকানের মালামাল। গড়ে তোলা হয়েছে লেগুনা স্ট্যান্ড।
এমনকি লালনপালন করা হয় ছাগলও। রেললাইনের ওপরেও ঝুঁকি নিয়ে বসছে দোকানিরা। এসবের প্রভাব পড়ছে মূল সড়কে। ফলে মূল সড়কে যানজট আর জনজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সড়কে চলাচল করা সাধারণ মানুষকে। এ ব্যাপারে নগর বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকার ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এর কোথাও ময়লার ভাগাড় হয়েছে। কোথাও বা মাদকসেবীদের আস্তানা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্লাইওভার দারুণভাবে সাজানো গোছানো আর রঙিন। এসব ফ্লাইওভারের নিচে শিশুদের খেলার জায়গা, স্ট্রিট থিয়েটার ও বসার জায়গা আছে। যেটি আমাদের দেশেও করা সম্ভব। এজন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।’