রাজশাহী মহানগরী এখন বিবর্ণ। ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। সড়ক খানাখন্দে ভরা। ময়লা পড়ে থাকে সড়কের পাশে। গত এক বছরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সব সেবায় ধস নেমেছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, এক বছর আগেও রাজশাহী মহানগরী এমন বিবর্ণ ও মলিন ছিল না। রাসিকের মেয়র এবং ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নেই এক বছর পেরিয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা মাসে একবারও কাউন্সিলর অফিসে যান না। নগরবাসীর কোনো সমস্যা সরাসরি শোনেন না। মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের কোথায় কী সমস্যা, তা জানারও চেষ্টাও করছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা। ওয়ার্ড কার্যালয়ে মাস ঘুরেও কোনো কর্মকর্তার দেখা মেলে না। ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিসের পিয়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে ফাইলে স্বাক্ষর নিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, মহানগরীর কেন্দ্রস্থল সাহেববাজার, গণকপাড়া, কুমারপাড়া, নিউমার্কেট, শিরোইল, ঘোষপাড়া, সিপাইপাড়া, সিঅ্যান্ডবি, লক্ষ্মীপুর, কোর্টবাজার ও কোর্ট স্টেশন, তালাইমারী, কাজলা, বিনোদপুর, শালবাগান ও ভদ্রাসহ সর্বত্র টাইলস বসানো পুরো ফুটপাত দখল করে বসছে দোকান। এসব দোকানের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হচ্ছে মূল সড়কের একাংশ দখল করে। তারপর থাকছে বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং। ফলে গাড়ি চলাচলের জন্য থাকছে মূল সড়কের এক তৃতীয়াংশ।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, প্রায় ২৫০ বছরের পুরাতন শহর রাজশাহীর নগর পরিবহনে বাস নেই। অথচ শহরের ১২টির বেশি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে আন্তজেলা ও দূলপাল্লার বাস কাউন্টার। নগরীর ভদ্রা মোড়ের পূর্বাংশের পুরো ফুটপাতসহ অর্ধেকের বেশি সড়ক দখল করে বানানো হয়েছে আন্তজেলা বাসের কাউন্টার ও স্ট্যান্ড। পথচারীরা এ পথে চলাচল করতে পারেন না। এ ছাড়া ভদ্রা মোড় থেকে রাজশাহী রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার ফুটপাত দখল করেছেন ভাঙারি ব্যবসায়ীরা। এই সড়কের রেশম ভবনের দেয়াল ঘেঁষে বিস্তৃত ফুটপাত দখলে নিয়ে বসানো হয়েছে ২০টির বেশি অস্থায়ী দোকান।
শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনের বড় সড়কটির ওপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে বাস। এখানে রেলওয়ে স্টেশনের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতের একাংশে গড়ে উঠেছে প্রস্রাবখানা। বাকি অংশ দখল করে বসানো হয়েছে বিভিন্ন পণ্যের দোকান। শিরোইলের ঢাকা বাস কাউন্টার থেকে রেশম কারখানার দেয়াল ঘেঁষে পুরো ফুটপাতের ওপর টিনের ছাউনি দিয়ে বসেছে ৫০টির বেশি স্থায়ী দোকানপাট। এই সড়কের উত্তরাংশে সারি সারি বাস রেখে দুই-তৃতীয়াংশ সড়ক ব্লক করে রাখা হয়।
রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, ‘ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। উচ্ছেদের আগে আমরা মাইকিং করে ফুটপাত থেকে দোকানপাট সরিয়ে নিতে অনুরোধ করছি। কেউ নিজেরা সরিয়ে না নিলে আমরা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করছি।’ তিনি বলেন, নাগরিকরা যাতে সেবা পান, সেজন্য সব চেষ্টা আছে।