রংপুরের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন শহর মাহিগঞ্জ। মোগল ও ব্রিটিশ আমলে এই এলাকাতেই ছিল রংপুর জেলা শহর। একসময় মাহিগঞ্জে বাস করতেন রাজা, জমিদার, মহারাজ ও পীর আউলিয়ারা। রংপুরের উল্লেখযোগ্য ডিমলা রাজবাড়ি। বর্তমানে এই রাজবাড়ির কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে আনুমানিক ১২৫ বছর আগের একটি কালীমন্দির দৃশ্যমান দাঁড়িয়ে আছে। এর রাজা ছিলেন জানকী বল্লভ সেন। তিনি এই কালীবাড়িটি নির্মাণ ও সাতটি পুকুর খনন করেছিলেন প্রজাদের সুবিধার্থে। তিনি জনস্বার্থে ১৯০৪ সালে তিনটি সাগর ও চারটি পুকুর বা দিঘি খনন করেছিলেন। সেগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। সাগর ও দিঘিগুলোতে এখনো স্থানীয় জনগণ গোসল করা, মাছ ধরা, নির্মল বিনোদন নিয়ে আসছেন।
প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এখানে যে তিনটি সাগর রয়েছে তা হলো- কালীসাগর, হরিসাগর ও রানীসাগর। স্থানীয়দের দাবি হরিসাগর নামকরণ করা হয়েছে কয়েক বছর আগে। এটাকে স্থানীয়রা গোলসাগর বলেন। কারণ এটি গোলাকৃতির। চারটি পুকুরের নাম হচ্ছে ধোপার দিঘি, তালতলার দিঘি, অন্তর দিঘি ও বাগানবাড়ির দিঘি। এই তিনটি সাগর ও চারটি পুকুর বা দিঘি ব্যবহারের জন্য রাজা জানকী বল্লভের নির্দেশনা ছিল।
কালীমন্দিরের সঙ্গে সংযুক্ত কালীসাগর যা ২ একর ৭৮ শতক জায়গায় খনন করা হয়েছে। এই সাগরে শুধু প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা ছিল। হরিসাগর অর্থাৎ গোল পুকুর ২ একর ৪৮ শতক জমিতে। এখানে অষ্টমীর স্নানসহ অন্যান্য পূজাপার্বণে ব্যবহার করা হতো। রানী সাগর ১ একর ৩৩ শতক জমির ওপর নির্মিত এখানে ধর্মীয় বিশেষ দিনগুলোতে রাজার মা বা অন্য রানীরা স্নান করতেন। ধোপার দিঘি ১ একর ৪৪ শতক জমির ওপর। এখানে শুধু কাপড়চোপর ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত হতো। তালতলার দিঘি ১ একর ৬৭ শতক জমির মধ্যে। এখানে বহিরাগতরা স্নান করতের। অন্তর দিঘি ৭৮ একর জমির মধ্যে নির্মিত। এটা শুধু রাজবাড়ির মহিলারা ব্যবহার করতেন। বাগানবাড়ির দিঘি ৭২ শতক জমির মধ্যে নির্মিত যা সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য খনন করা হয়েছিল। গোল দিঘি এটাও ১ একর ৪৪ শতক জমি নিয়ে করা হয়েছে। এখানে মৎস্য চাষ ও হাঁসের অবাধ বিচরণ ছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা জানকী বল্লভ সেন। তিনি ছিলেন রংপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান। সাতটি পুকুরের মধ্যে কালীসাগর ও হরিসাগর ব্যক্তিমালিকানায় রয়েছে। বাকি পাঁচটি পুকুর সরকারি ডিমলা রাজদেত্তোর স্টেট পরিচালিত করে আসছেন। সারা দেশ থেকে প্রচুর দর্শনার্থী এখানে আসে দেখার জন্য।