এক দেশের মুদ্রা অন্য দেশে প্রচলিত নয়। দুটি ভিন্ন মুদ্রার দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেনা-পাওনা কীভাবে মেটাবে এ প্রশ্ন জাগে। এ ক্ষেত্রে উপায় হলো এক দেশের মুদ্রার মূল্যকে অন্য দেশের মুদ্রায় রূপান্তর করা। একে বলা হয়, মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ। তাই জানতে হবে এক দেশের মুদ্রার বিনিময় হার বা এক্সচেঞ্জ রেট অন্য দেশের মুদ্রার বিপরীতে কীভাবে নির্ধারিত হয়। বেশ কিছু উপযোগী তত্ত্ব বিবেচনা করে মুদ্রার বিনিময় হার বা মান নির্ধারণ করা হয়। যেমন একটি হলো স্বর্ণমান তত্ত্ব। এক সময় ব্যাংক স্বর্ণমুদ্রা জমা রেখে তার বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাগুজে নোট ছাপাত। যে দেশে স্বর্ণমান মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন থাকে তাকে বলা হয় স্বর্ণমান দেশ। স্বর্ণমানদেশসমূহে মুদ্রার বিনিময়ের হারকে বলা হয় স্বর্ণমান বিনিময় হার। আরও একটি তত্ত্ব হলো পার ভ্যালু তত্ত্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রয়োজনে স্থিতিশীল বিনিময় হার ব্যবস্থার প্রবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রতিষ্ঠিত হয়। মার্কিন ডলারের নির্ভরযোগ্যতা বিবেচনায় এনে আইএমএফ তার সদস্য দেশগুলোকে পরামর্শ দেয়- প্রতিটি দেশ যেন তাদের দেশের বিনিময় হার তথা মুদ্রার মান ডলারের সাপেক্ষে নির্ধারণ করে। আইএমএফ এ ব্যবস্থার নাম দেয় পার ভ্যালু ব্যবস্থা। ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে তার জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু এ দীর্ঘদিনের শক্তপোক্ত অবস্থান ছাড়াও কিছু কারণ রয়েছে। যার ফলে ডলার বর্তমান সময়েও এতটা শক্তিশালী। এর একটি কারণ এখনো পর্যন্ত ডলার যে কোনো কিছুর পরিপ্রেক্ষিতে অন্যতম নির্ভরযোগ্য সম্পদ। অর্থাৎ অন্য কোনো মুদ্রা, সোনা বা শেয়ার তার দাম অস্বাভাবিকভাবে পড়তে-উঠতে পারে। কিন্তু সেই তুলনায় ডলার অনেকটাই স্থিতিশীল। এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে ডলার সব থেকে বেশি ছাপা হওয়া মুদ্রার মধ্যে একটি। আরও একটি তত্ত্ব হলো লেনদেন ভারসাম্য তত্ত্ব। পার ভ্যালু ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘোষণার পর থেকে কাগুজে মুদ্রার পেছনে থাকা স্বর্ণ-শক্তি ওঠে যায়। এর দ্বারা কাগুজে নোট পরিণত হয় ফিয়াট মুদ্রায়। এ মুদ্রার পরিমাণ কোনো সীমিত বস্তুর ওপর নির্ভরশীল নয়, ফলে বিনিময় হারও স্থির থাকে না। মুদ্রার বিনিময়ের হারকে বলা হয় ভাসমান বিনিময় হার। যে তত্ত্বের মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা হয় তার নাম লেনদেনের ভারসাম্য তত্ত্ব। অর্থনীতির একটি চিরন্তন সত্য হচ্ছে- পারিপার্শ্বিক অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে কোনো বস্তুর চাহিদা বৃদ্ধি পেলে বস্তুটির দাম বাড়বে। ডলারের বেলায়ও এমনটিই ঘটবে। এ ক্ষেত্রে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বাড়বে এবং একটি ভারসাম্য অবস্থায় এসে এর বিনিময় মূল্য নির্ধারিত হবে। অন্যদিকে বিদেশি ক্রেতারা আমাদের পণ্য কিনতে চাইলে তাদের দুটি মূল্য বিবেচনায় আনতে হবে, আমদের বাজারে পণ্যটির দাম এবং ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার। এ দুই মূল্যের তথ্য মিলিয়ে যে সূচক তৈরি করা হয় তার নাম রিয়েল ইফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট ইনডেক্স।