‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সব দপ্তরে একই সময়ে এ কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। দাবি পূরণ না হলে ৩১ মের পর থেকে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। কর্মচারীদের দাবির বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে ধরবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ। প্রধান উপদেষ্টা বর্তমানে বিদেশে আছেন। দেশে ফিরলে বিষয়টি তুলে ধরা হবে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ।
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গত শনিবার থেকে টানা চার দিন সচিবালয়ের ভিতরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। নিজেদের দপ্তর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক কর্মচারী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাঁরা এ অধ্যাদেশকে নিবর্তনমূলক ও কালো আইন উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি করেন। মঙ্গলবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে কয়েকজন সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে গতকাল এক দিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, কর্মচারীদের দাবির বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তুলে ধরবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ। প্রধান উপদেষ্টা বর্তমানে বিদেশে আছেন। দেশে ফিরলে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে কর্মচারীদের কথা ও আলোচনার বিষয়টি জানানো হয়েছে। এখন এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রধান উপদেষ্টার কাছে তিনি তা তুলে ধরবেন। ৩১ মে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। পরে গতকাল বেলা ২টার দিকে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদীউল কবীর সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশকে ‘অবৈধ কালাকানুন বা কালো আইন’ উল্লেখ করে বলেন, এটি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি একটি সবুজসংকেত পেয়েছি। আশা করি, আমাদের আলাপ-আলোচনার ফলশ্রুতিতে যে ফলাফল আসবে, তাতে কর্মচারীরা সন্তুষ্ট হবেন। এরই মধ্যে অধ্যাদেশ বাতিলের বিষয়ে উত্থাপিত দাবি নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বিষয়টির কুফল সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। এই কালো বা নিবর্তনমূলক আইন রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ ও কর্মচারীদের জন্য ফলপ্রসূ নতুন কোনো কিছু বয়ে আনবে না। রাষ্ট্রের স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে কর্মচারীদের মানমর্যাদা ও কর্মস্থলের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অনুকূল কর্মপরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে আমরা উপদেষ্টামণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। সচিব পর্যায়েও আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। বাদীউল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেই কাঙ্ক্ষিত বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে, ইনশা আল্লাহ।
এই কর্মচারী নেতা বলেন, সববিষয় চিন্তা-ভাবনায় রেখে আগামী দিনগুলোতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে জরুরি সেবার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা সচিবালয় শুধু প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি চলতে থাকবে। মাঠ পর্যায়ে সব দপ্তর, পরিদপ্তর, অধিদপ্তর এবং ডিসি অফিস, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত, আমাদের পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
বাদীউল কবীর বলেন, তবে জরুরি সেবা, যেমন যাঁরা বাজেটের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যাঁরা হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন, সেসব কর্মচারী যেন যত কম সময় এ কর্মবিরতি পালন করেন। সেটি যেন আধা ঘণ্টার বেশি না হয়, সেই অনুরোধ জানান তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঐক্য ফোরামের আরেক কো- চেয়ারম্যান মুহা. নূরুল ইসলাম বলেন, ৩১ মে পর্যন্ত তাঁদের এ কর্মবিরতি চলবে। এরপর অবশ্যই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। যদি ৩১ মের পর ভালো কোনো ফলাফল না পাওয়া যায়, তাহলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সেই কর্মসূচি পরে পরিষ্কার করা হবে। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এর পর থেকে এ অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আন্দোলনের মধ্যেই গত রবিবার সন্ধ্যায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার।