শেখ হাসিনা এবং তাঁর দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীও এত জঘন্য অপরাধ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘৭১ সালে ডেডবডি পুড়িয়ে ফেলেছে এমন ফুটেজ আমি দেখিনি। কিংবা ৭১ সালে একজন গুলি খেয়েছে, তাকে ধরে পিছু নিয়ে যাচ্ছে তাঁর বন্ধু, সে অবস্থায় তাঁকে গুলি করেছে, এ রকম কোনো ফুটেজ বা এ রকম কোনো বর্ণনা আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধার বর্ণনায় পড়িনি। অন্য রকম নৃশংসতা থাকতে পারে, কিন্তু এ রকম নৃশংসতা পড়িনি।’
গতকাল রাজধানীতে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার : আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আইন উপদেষ্টা। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা উপলক্ষে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রমুখ। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখার জন্য বিচারে সময় লাগছে বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বিচার পাওয়ার সময়সীমা বলে দিলে সবাই খুশি হয়। কিন্তু এ ধরনের ঘোষণা প্রতিপক্ষকে সুযোগ করে দেয়।’ জুলাইয়ে গণহত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কোনো অনুশোচনা নেই বলে মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘তারা এখনো মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, এখনো তাঁর নির্যাতন করার ইচ্ছা, প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে।’
আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তাঁর দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছেন, আমি সরি, আমার মনে হয় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী এত জঘন্য অপরাধ করেনি। মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা, আহত মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা। আনআর্মড (নিরস্ত্র) মানুষ আহত হয়ে যাচ্ছে যখন, তখন গুলি করে মেরে ফেলা। আপনারা বলতে পারেন, ২৫ মার্চে কালরাতে হয়েছে। অবশ্যই ২৫ মার্চে কালরাতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একদম ওটা তো অন্য দেশের বাহিনী। আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা করেছি তার পর।’
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচারিক পদ্ধতি মেনেই বিচার করা হচ্ছে। যাতে এ বিচার নিয়ে কখনো কোনো নেতিবাচক কথা উঠতে না পারে।’
বড় অংশের বিচার শেষ হবে ডিসেম্বরে : জুলাই গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) করা মামলায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি বড় অংশের বিচার শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের শহীদদের পরিবার, শহীদদের স্বজন, ভিকটিমদের আবেগ যেমন অ্যাড্রেস করতে হয়, তাদের বিচারের যে দাবি, যে তৃষ্ণা, সেটা যেমন অ্যাড্রেস করতে হয়, একইভাবে আইন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড, আসামির অধিকার এগুলোকেও মেইনটেন (বজায়) করতে হয়। সেটা করতে যে যুক্তিসংগত সময় দরকার, সেটা আমরা নিয়েছি, সেটা আমরা নিচ্ছি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, এ বিচার বছরের পর বছর লাগবে, তা না। যেভাবে বিচার প্রক্রিয়া আগাচ্ছে, টপ কমান্ডারদের বিচার একটা বড় অংশের বিচার, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সমাপ্ত হবে বলে আমরা আপনাদের আশ্বাস দিতে পারি।’ গতকাল রাজধানীর কলেজ রোডস্থ বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার : আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন আইসিটির চিফ প্রসিকিউটর।