জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় হাই কোর্টে খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার চিকিৎসক স্ত্রী জুবাইদা রহমান। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ডা. জুবাইদা রহমানের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর আগে জুবাইদা রহমানের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয় ২৬ মে। সেদিন রায়ের জন্য গতকালের দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
বুধবার (২৮ মে) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু করে বিকাল ৪টার দিকে শেষ করেন হাই কোর্ট। এ মামলায় তারেক রহমানকে ছয় বছর এবং ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। আদালতে আপিলের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী কায়সার কামাল ও জাকির হোসেন ভূঁইয়া শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, হাই কোর্ট আপিল মঞ্জুর করেছেন এবং জুবাইদা রহমান নির্দোষ সাব্যস্তে খালাস পেয়েছেন। আমরা আপিল শুনানি করতে গিয়ে দেখিয়েছি সুপ্রিম কোর্টের সম্প্রতি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা, মানি লন্ডারিং মামলা, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে একটি মানি লন্ডারিং মামলা ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা-মামলায় তারেক রহমানের কোনো আপিল ছিল না। সেখানে যারা আপিল করতে পারেনি তাদেরও খালাস দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমানকেও খালাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম একটি টাকাও বাংলাদেশের বাইরে নেই। এ মামলায় খালাসের মধ্য দিয়ে এটি আবার প্রতিষ্ঠিত হলো- জিয়া পরিবারের বাংলাদেশের বাইরে কোনো সম্পদ নেই, ঠিকানা নেই। অন্য দেশে টাকা থাকলে সেটা বের করে অভিযোগ সংশোধন করে সাজা দেওয়া যেত। কিন্তু কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তাই তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানকে নির্দোষ ঘোষণা করে খালাস দিয়েছেন।
রায়ের পর দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, জুবাইদা রহমানের আপিল মঞ্জুর করে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাই কোর্ট। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও এ রায় প্রযোজ্য হবে, তিনি এ রায়ের সুবিধা পাবেন। অর্থাৎ এ মামলায় তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমান খালাস পেলেন। রায়ের বিষয়ে আপিল করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, হাই কোর্টের রায়ের বিষয়টি আমি দুদককে অবহিত করব। আপিলের বিষয়ে দুদক সিদ্ধান্ত নেবে।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, ডা. জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এ মামলায় ২০২৩ সালের ২ আগস্ট রায় দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ। রায়ে দুটি ধারায় তারেক রহমানকে ৯ বছরের কারাদণ্ড (ছয় ও তিন বছর, একসঙ্গে চলবে) এবং ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এ মামলায় ডা. জুবাইদা রহমানের সাজা স্থগিত করে গত বছরের ৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাজা স্থগিত চেয়ে জুবাইদা রহমানের করা আবেদন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে তার বিরুদ্ধে করা মামলায় তাকে দেওয়া দণ্ডাদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হলো।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ৬ মে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। দেশে ফিরে আপিল করার জন্য ৫৮৭ দিন বিলম্ব মার্জনা চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন ডা. জুবাইদা রহমান, যা ১৩ মে মঞ্জুর করেন আদালত। বিলম্ব মার্জনার আবেদন মঞ্জুরের পর তিনি আপিল করেন এবং জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে ১৪ মে হাই কোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন এবং জামিন মঞ্জুর করেন। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল রায় দিলেন হাই কোর্ট।