মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ব্যাপক শুল্ক কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছে মার্কিন ফেডারেল আদালত। আদালত তার রায়ে বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করে এই শুল্ক আরোপ করেছেন। এর ফলে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাধারণ আমেরিকান ভোক্তাদেরও আমদানি করা পণ্যের বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।
ম্যানহাটনে অবস্থিত মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের তিন বিচারকের একটি প্যানেল এই স্থগিতাদেশ জারি করেছে। গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প 'জরুরি অর্থনৈতিক অবস্থা' দেখিয়ে এই শুল্ক আরোপ করেছিলেন। আদালতের এই রায়ের ফলে চীন, মেক্সিকো এবং কানাডার ওপর চলতি বছরের শুরুতে আরোপিত সেই শুল্কগুলো কার্যকর হওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
আদালত একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী শুল্ক কার্যক্রমকে বন্ধ করে দিতে পারে। এই আদেশ কার্যকর করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ১০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। যদি আপিল বা সুপ্রিম কোর্টেও এই রায় বহাল থাকে, তাহলে ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্ক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাবে। এই আদেশ অনুযায়ী, চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্ক, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে কিছু পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রে আসা বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ সার্বজনীন শুল্ক বন্ধ হয়ে যাবে।
তবে এই রায় গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কের ওপর প্রযোজ্য নয়। কারণ, এসব শুল্ক ট্রাম্প ট্রেড এক্সপানশন অ্যাক্টের সেকশন ২৩২ অনুযায়ী আরোপ করেছিলেন।
আদালতের এই রায়ের পরপরই ট্রাম্প প্রশাসন আপিল করেছে। এর ফলে ভোক্তা ও কোম্পানিগুলোর জন্য পরিস্থিতি অনিশ্চিত রয়ে গেছে এবং এই শুল্ক বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে লড়াই দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
আদালতের রায়ের পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান দেখা যায়। আফটার আওয়ার্স ট্রেডিংয়ে ডাও ফিউচারস সূচক প্রায় ৫০০ পয়েন্ট বা ১.১ শতাংশ বেড়েছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচারস ১.৪ শতাংশ এবং নাসডাক ফিউচারস ১.৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই মামলাটি দায়ের করে লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার নামে একটি লিবার্টারিয়ান আইন সহায়তা সংস্থা। তারা মদ বিক্রেতা ভিওএস সিলেকশনস এবং আরও চারটি ছোট ব্যবসাকে প্রতিনিধিত্ব করছিল। তারা দাবি করে, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে তারা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিন বিচারকের প্যানেল একমত হয়ে এই রায় দেয়। এই রায়ের সঙ্গে ওরেগনসহ ১২টি ডেমোক্র্যাটিক রাজ্যের পক্ষ থেকে দায়ের করা আরেকটি মামলার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কালিয়া ল স্কুলের আইন প্রফেসর এবং মামলার আইনজীবী ইলিয়া সোমিন সিএনএন-কে বলেন, "আমরা জিতেছি – ওরেগন এবং অন্যান্য রাজ্যের বাদীরাও জিতেছে।" তিনি আরও বলেন, "আদালতের মতামত বলছে, লিবারেশন ডে এবং অন্যান্য আইইইপিএ (আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন) শুল্কগুলো অবৈধ এবং স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ।"
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক অংশীদারদের কাছ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর 'পাল্টা' শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন এবং জাতীয় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। তবে ৯ এপ্রিল, তিনি এই শুল্কের কার্যকারিতা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। এরপরও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসা বেশিরভাগ পণ্যের ওপর ১০% 'সার্বজনীন' শুল্ক বহাল রাখেন। ট্রাম্প এসব শুল্ক কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) ব্যবহার করে আরোপ করেন। এই আইনে 'অস্বাভাবিক ও গুরুতর হুমকি'র সময় প্রেসিডেন্টকে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে আইনে শুল্ক আরোপের উল্লেখ নেই যে, এটি প্রেসিডেন্টের জন্য অনুমোদিত পদক্ষেপ হতে পারে।
বাদীপক্ষ মামলায় অভিযোগ করেছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইইইপিএ অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেনি এবং আইইইপিএ প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় না। আদালত এই যুক্তির সঙ্গে একমত হয়েছে এবং রায়ে বলেছেন, জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেও ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কোনো বৈধ ক্ষমতা নেই।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক কার্যক্রম স্থগিতের এই আদেশ মার্কিন বাণিজ্য নীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। আপিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল