বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

দ্রোহের অগ্নিবীণা

'বল বীর/চির উন্নত মম শির-' মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহসী উচ্চারণে সূচনা করলেন বিদ্রোহের বাণী। তিনি আর কেউ নন, আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল এখনো আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তার কর্মে স্বমহিমায়।

একজন কবির দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর করে তার সমসাময়িক অবস্থা বা প্রেক্ষাপটের ওপর। কোনো সচেতন শিল্পী তার সময় ও সমাজকে কখনোই অস্বীকার করতে পারেন না। কবি কাজী নজরুল ইসলামও তার ব্যতিক্রম নন। কাজী নজরুল ইসলাম দেশের এমন এক সংকটময় মুহূর্তে আবির্ভূত হয়েছেন; যখন মুক্তি সংগ্রামের স্লোগান আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। ফলে এ আন্দোলন সংগ্রামের প্রভাব পড়েছে তার কাব্যে।

দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার নেশায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন উন্মাদ। দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে হয়েছেন মহাবিদ্রোহী। কিন্তু তারপরও মানব মনের চিরন্তন প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার কাব্যে। কখনো তার বিদ্রোহের মাঝে প্রেম; আবার কখনো প্রেমের মাঝে বিদ্রোহ। দুটোই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়েছিল প্রিয়তমার মতো।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বমহিমায় বাংলা সাহিত্যে চিরভাস্বর হয়ে আছেন। তার 'অগ্নিবীণা', 'বিষের বাঁশি', 'ঘুম ভাঙার গান', 'ফণিমনসা', 'সর্বহারা', 'জিঞ্জির', 'সন্ধ্যা', 'প্রলয় শিখা', 'সাম্যবাদী' ইত্যাদি কাব্যের মাধ্যমে তিনি জাগরণের গান শুনিয়েছেন মানুষকে। জাতির বন্দিত্ব মোচনের জন্য তার প্রচেষ্টা ছিল অকৃত্রিম। তিনি বিক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন-'লাথি মার ভাঙরে তালা, যতসব বন্দীশালা, আগুন জ্বালা আগুন জ্বালা।'

তার এ বিদ্রোহ অনাসৃষ্টির জন্য নয়, পুরাতনকে ভেঙে নতুন করে গড়ার বিদ্রোহ। দেশ-জাতি-সমাজকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তার বিদ্রোহ শাসক, যাজকও সমাজপতিদের বিরুদ্ধে। তার এ বিদ্রোহ নিরন্তর। যতদিন না এর কোােন প্রতিকার হবে।

নিপীড়িত মানুষের মুক্তির পর কবির এ বিদ্রোহ সমাপ্ত হয়ে যাবে। বাস্তবিক অর্থে মানুষকে কতটা ভালোবাসলে এমন বিদ্রোহী হয়ে ওঠা যায়?

নিঃসন্দেহে কাজী নজরুল ইসলামের 'অগ্নিবীণা' একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'বিদ্রোহী' কবিতার জন্যই তিনি আজ সর্বত্র 'বিদ্রোহী কবি' হিসেবে সমাদৃত। বিদ্রোহী অভিধায় অভিসিক্ত হলেও কাজী নজরুল ইসলাম একজন খাঁটি প্রেমিক। 'বিদ্রোহী' কবিতার জন্য কারাবরণ করলেও প্রেমের মহিমার ক্ষেত্রে আরও বেশি সমুজ্জ্বল তিনি। অন্তরে প্রেম না থাকলে কখনো এমন বিদ্রোহ আসে না। 'মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরি আর হাতে রণতূর্য'- এ যেন কবি নজরুলের অন্তরের কথা।

এ ছাড়া নারীর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গানে ও কবিতায়। নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন তিনি। নারীকে যথাযথ মর্যাদা দিতে গিয়ে কবি বলেছেন- 'বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

 

 

 

সর্বশেষ খবর