বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোজার ইতিহাস

রোজার ইতিহাস

ইসলামের পঞ্চ-স্তম্ভের অন্যতম একটি হলো রোজা। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন।

রোজা শুধু আমাদের ওপর ফরজ করেছেন তা কিন্তু নয় বরং আমাদের পূর্ববর্তী সবার ওপরই রোজার বিধান ছিল। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আ.) এর ওপর রোজার বিধান আরোপ করে মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম রোজার প্রচলন শুরু করেন এবং আমাদের পূর্ববর্তী সব নবী ও উম্মতের ওপরও রোজার বিধান আরোপ করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা খোদাভীরু হতে পার। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আলুসি (র.) স্বীয় তাফসির গ্রন্থ ‘রুহুল মাআনি’তে উল্লেখ করেছেন যে, উপরোক্ত আয়াতে ‘মিনকাবলিকুম’ দ্বারা হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত সব নবী-রসুলের জামানা বুঝানো হয়েছে। কোরআন ও হাদিস গবেষণা করলে রোজার ইতিহাস সম্পর্কে যতদূর জানা যায়, মহান আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে জান্নাতে প্রেরণ করে একটি গাছের ফল খেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশেষ এক ধরনের রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করলেন। এ ব্যাপারে দয়াময় আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং সেখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তসহ খেতে থাক, কিন্তু তোমরা এ গাছের কাছে যেও না। (যদি যাও বা তার ফল ভক্ষণ কর) তাহলে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। (সূরা বাকারা, আয়াত-৩৫)। মুফাসসিরে কেরাম বলেন, এটাই ছিল মানব ইতিহাসের প্রথম রোজা। হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) শয়তানের প্ররোচনার শিকার হয়ে ওই গাছের ফল ভক্ষণ করেছিলেন এবং এর পরিণামে মহান আল্লাহতায়ালা তাদের ভূ-পৃষ্ঠে পাঠিয়ে দিলেন। অতঃপর তারা উক্ত ভুলের জন্য যারপরনাই অনুতপ্ত হন, তওবা ইস্তিগফার করেন এবং এর কাফ্ফারাস্বরূপ ধারাবাহিক ৪০ বছর রোজা রেখেছিলেন। হজরত আদম (আ.)-এর পর অন্য সব নবী-রসুলের জামানায়ও রোজার বিধান ছিল। তবে তাদের রোজা পালনের পদ্ধতি ভিন্নতর ছিল। হজরত নুহ (আ.) এর উপরও রোজা ফরজ ছিল; রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হজরত নুহ (আ.) ১ শাওয়াল ও ১০ জিলহজ ব্যতীত সারা বছর রোজা রাখতেন। (ইবনে মাজাহ)।

হজরত মুসা (আ.) এর ওপর তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ হওয়ার আগে তিনি ৩০ দিন রোজা রেখেছিলেন। অতঃপর মহান আল্লাহতায়ালা তার ওপর ওহি নাজিল করলেন এবং আরও দশ ১০ দিন রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করলেন। হজরত ইদ্রিস (আ.) বছরজুড়ে প্রতিদিন রোজা রাখতেন। হজরত দাউদ (আ.) একদিন পর পর রোজা রাখতেন।

মহানবী (সা.) মদিনায় আগমন করার পর শুধু আশুরার রোজা রাখতেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করে দেখলেন, মদিনার ইহুদিরা মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আজকে তোমরা কিসের রোজা রাখছ? উত্তরে তারা বলল, আজ সেই দিন যেদিন মহান আল্লাহতায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার কওমকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন আর ফেরাউনকে সদলবলে নীল দরিয়ায় ডুবিয়ে মেরেছিলেন। ফলে শুকরিয়াস্বরূপ এ দিন মুসা (আ.) রোজা রেখেছিলেন। তাই আমরাও এ দিন রোজা রাখি। অতঃপর রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমরা তোমাদের থেকে মুসা (আ.) অনুসরণের অধিক হকদার। এরপর তিনি আশুরার দিন রোজা রাখলেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করলেন। (বোখারি, মুসলিম)।

সর্বোপরি ১০ শাবান দ্ব্বিতীয় হিজরিতে মহান আল্লাহতায়ালা রমজানের রোজা ফরজ মর্মে পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করেন। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের মাহে রমজানের রোজাগুলো সঠিকভাবে পালনের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

অবশেষে ‘মাহে রমজানের আহ্বান’ নিয়ে আমার রচিত একটি ছড়া পাঠকদের খেদমতে উপস্থাপন করলাম— ‘বছর ঘুরে আসছে আবার রমজানেরই দিন, রাখবে রোজা পড়বে নামাজ সব মানব জিন।

বুঝবে সবাই গরিব-দুঃখীর ক্ষুধার কেমন জ্বালা, সবাই চাইবে অর্জিত হোক জান্নাতেরই মালা।’

 

লেখক—

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ,

কাজলা (ভাঙ্গাপ্রেস), যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর