ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেছেন, আমরা ছাত্রশূন্য ক্যাম্পাস দেখতে চাই না। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে এসে যেন জাতি গঠনের সুযোগ পায়, সেটিকেই আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে এখন যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা সেটি থেকে কাটিয়ে উঠতে জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল আয়োজিত এক সমাবেশে এসব কথা বলেন আখতারুজ্জামান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের নিরাপত্তা, শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং সাম্প্রতিক আন্দোলনে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সহিংসতা ও নাশকতার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ দেব, কারণ তারা জাতিকে আরেকটা শিক্ষা দিল এবং ইতিহাসের একটি অংশ হলো। শিক্ষার্থীরা দেখিয়েছে, কীভাবে নিরস্ত্র উপায়ে দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে ন্যায়সংগত যৌক্তিক অধিকার আদায় করতে হয়। এখন যে সংকট এটি জাতীয় সংকট, এটি কোনো একাডেমিক সংকট না। এই সংকট তৈরি হয়েছে কিছু রাজনৈতিক স্থবিরতার কারণে। এই সংকটের সমাধান করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে দরকার জাতীয় ঐক্যের এবং সে জন্য সংলাপের বিকল্প নেই। কারণ সহিংসতার মধ্যদিয়ে কোনো কিছু অর্জিত হবে না। এই আন্দোলন বর্তমানে একটি রাজনৈতিক রূপ লাভ করেছে। ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। এই রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে রাজনৈতিক সংলাপ করতে হবে।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছে, এ দেশের জনগণকে হত্যা করেছে আমরা তাদের বিচার চাই। সরকার তদন্ত কমিটি করেছে। সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। আমি মনে করি, সঠিক বিচার এ দেশের মানুষ পাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলব, সরকারকে বলুন; হত্যাকারীদের বিচার করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে।
সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর পাঁচ দফা দাবিসহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে স্মারকলিপি দেন নীল দল সমর্থিত শিক্ষকরা।
দাবিসমূহ হলো-
১. কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের অবিলম্বে শান্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২. আবাসিক হলগুলোতে বৈধ এবং নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৩. আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের জীবনমানের উন্নয়ন, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং যেকোনো ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন রোধে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলোতে শুধু বৈধ শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিশ্চিতকরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫. ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় শিক্ষকরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও আহত-নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া গ্রেফতারকৃত সকল শিক্ষার্থীদের অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান তারা।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত