ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে কত প্রাণ ঝরল তার যোগফল এখনই টানা যাচ্ছে না। কারণ, মধ্য-জুলাই থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহজুড়ে সারা দেশে সহিংসতায় প্রায় অর্ধ সহস্র মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অনেকের মৃত্যু হচ্ছে এখনো। আরও কত প্রাণপ্রদীপ নিভে যাবে কেউ জানে না। এর মধ্যে শিশু-নারী, শিক্ষার্থী তরুণ-তরুণী, শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ যেমন আছেন; তেমন আছেন ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এরা সবাই এ দেশের নাগরিক, বাংলা মায়ের সন্তান। প্রতিটি হতাহতের দায় রাজনীতি ও রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রকদের। যাদের প্ররোচনায়, ইন্ধনে, হুকুমে দেশজুড়ে ধ্বংসের মচ্ছব ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চলেছে এদের বিচার এবং উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা অবশ্য-কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের এ অঙ্গীকার যেন বাস্তবায়ন হয়। অত্যন্ত বেদনাদায়ক এক রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতায় নিহত ২০ জনের লাশ এখনো পড়ে আছে রাজধানীর তিন মর্গে। প্রায় এক সপ্তাহ পুলিশ কাজে না থাকায় সুরতহাল হয়নি। বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় যথাযথ সংরক্ষণ না হওয়ায় পচে-ফুলে লাশগুলো বিকৃত হয়ে গেছে। চেনার উপায় নেই। বায়োমেট্রিক ডেটা নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। অথচ অনেক পরিবার নিখোঁজ সন্তান-স্বজনদের খুঁজে ফিরছে পথে পথে, হাসপাতালে। কুমিল্লার এক সন্তানহারা মা আহাজারি করে বলেছেন, ‘মারছে তো মারছে; ছেলের লাশটাও পাইলাম না। শুনছি গণকবর দিছে। জানি না কে কোথায় তারে কীভাবে দাফন করছে কি করে নাই।’ বুকভাঙা এরকম হাহাকার অনেক পরিবারেই। তারা নিহত সন্তান-স্বজনকে তো আর ফিরে পাবেন না, অন্তত লাশটাও যদি পান, চোখের জলে বুক ভাসিয়ে, কাফনে-দাফনে তার স্মৃৃতিটুকু ধরে রাখতে পারবেন। এটুকু চাওয়া খুবই মানবিক আর্তি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। নিখোঁজদের তালিকা করে এবং মর্গে পড়ে থাকা লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে শনাক্তকরণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বেওয়ারিশ লাশ নয়, এরা জুলাই বিপ্লবের শহীদ। এটুকু সম্মান, প্রিয়জনদের স্নেহ-ভালোবাসা-মমতার স্পর্শে মর্যাদার দাফন তাদের প্রাপ্য।