কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সুন্দর আগামী কামনা ও ভক্ত-বিশ্বাসীদের অশ্রুসজল চোখে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব। এর আগে শনিবার দেবী দুর্গার দশমী বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জন করা হয়। এদিকে, এ বছর দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ধরেই ছিল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ।
দশমীর পূজা শেষে প্রতিমা বিসর্জনের রীতি থাকলেও তিথির নিয়মে বিসর্জন সম্ভব হবে না বলে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার ধর্মীয় আচার সম্পন্ন হয়। গতকাল সকাল থেকেই মন্দিরে মন্দিরে সধবা নারীরা অংশ নেন সিঁদুর খেলায়। সিঁদুর পরিয়ে একে অপরকে মিষ্টিমুখ করান।
গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে দেখা যায়, সকাল থেকেই বিসর্জনের প্রস্তুতির পাশাপাশি সিঁদুর খেলা চলে ধুমধামে। বিবাহিত নারীদের সঙ্গে তাঁদের স্বামী-সন্তানেরা এবং অন্যরা শেষবারের মতো দেবীকে প্রণাম জানাতে মন্দিরে মন্দিরে সমবেত হন। রঙের হুল্লোড়ে ভাসিয়ে বিদায় নেন দেবী দুর্গা। পূজা শেষে মহিষাসুর মোর্দিনী দেবী দুর্গার আশীর্বাদে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে যেতে পরিবারের সবাই ধারণ করেন অপরাজিতা। ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রার আগে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা জড়ো হতে থাকে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ ও পলাশী মোড়ে। পরে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বুড়িগঙ্গার তীরে এসে শেষ হয় এ শোভাযাত্রা। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পূজা কমিটির পক্ষ থেকে পুরান ঢাকার সদরঘাট টার্মিনালের কাছে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাটে অস্থায়ী প্রতিমা বিসর্জন মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া ওয়াইজঘাট, তেলঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এদিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এবার ঢাকার মোট ১১টি স্থানে বিসর্জন দেওয়ার নির্দেশনা ছিল কর্তৃপক্ষের। এর মধ্যে ছিল লালবাগের ওয়াইজঘাট ও লালকুঠিঘাট, ওয়ারীর পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট, আলমগঞ্জ ঘাট, শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাট ও বালু নদের ঘাট, উত্তরার আশুলিয়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট, রায়েরবাজার, মিরপুর আমিনবাজার ব্রিজের উত্তর পাশ, মতিঝিলের শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের পাশের পুকুর এবং মতিঝিলের মান্ডা আমিন মোহাম্মদ লেক। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে উপরোক্ত এলাকা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। সদরঘাট ও এর আশপাশ এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। ট্রলার ও স্পিডবোটে বুড়িগঙ্গা নদীতে টহল দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিমা ঘাটে নিয়ে আসার
পর শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন ভক্তরা। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জনের এ পর্ব রাত পর্যন্ত চলে। উল্লেখ্য, এবার দেবীর আগমন ঘটেছিল ‘দোলায়’। শাস্ত্রমতে, দোলায় আগমনের অর্থ পৃথিবীতে মড়ক দেখা দিতে পারে। রোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা হানাহানিতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। দেবী গমন করেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায়। যার অর্থ সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।