এখন মুক্তিযুদ্ধের উল্টো স্রোতে গেছে দেশ। যে লক্ষ্য ও চেতনা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম তা মোটেই অর্জিত হয়নি। মূল উদ্দেশ্যটাই ছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা। তা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং পাকিস্তান আমলের চেয়ে খারাপ এখন দেশের সুশাসনের অবস্থা। আর এটা গত ১৫-১৬ বছরে একেবারেই ধ্বংস করে রেখে গেছেন শেখ হাসিনা ও তাঁর হাইব্রিড নেতারা। স্বাধীন বাংলাদেশের বাহ্যিক বা দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশে বহুতল ভবন বেড়েছে, ব্যবসাবাণিজ্য বেড়েছে। বাঙালি ছেলেরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে, ব্যাংকের এবং কলকারখানার মালিক হয়েছে, যা আগে ছিল পাকিস্তানিদের। এ ধরনের বাহ্যিক অনেক উন্নতি হয়েছে এবং নতুন করে একটা শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রিয়েল উন্নতি বলতে যেটাকে বলা হয় সেটা হলো সুশাসন। এ সুশাসন বাংলাদেশে একদম অনুপস্থিত। এ দেশের মানুষের কোনো অধিকার নেই। মানবাধিকার নেই। গণতন্ত্র নেই। গরিব মানুষের পেটে ভাত নেই। পরনে কাপড় নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা যেভাবে দেশকে দেখতাম, আমাদের দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে যেভাবে দেখা হতো সেভাবে এখন আর দেখা হয় না। মুক্তিযুদ্ধের ওই চেতনার স্তর ধ্বংস হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের রিয়েল চেতনাটা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। কিন্তু বাহ্যিক উন্নয়ন তো হয়েছেই। আগে যেখানে দেখতাম আদমজীর নাতির বড় বড় গাড়ি রোলস রয়েস্, এখন দেখি সালমান রহমানদের ছেলেদের দামি গাড়ি।
সুশাসন এখন বাংলাদেশে টোটাল অনুপস্থিত। এটা এখন পাকিস্তান আমলের চেয়েও খারাপ। মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে এটাকে সামনে রেখে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটা সম্মেলন আয়োজন করা উচিত। শপথ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভালোমানুষ, ত্যাগী মানুষের একটা সম্মেলন করতে হবে। এ সম্মেলনের আয়োজন করবে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। দেশে এখন মিছিল বের হয় একটা মসজিদ থেকে, আরেকটা মন্দির থেকে। রাজপথ খালি, বিশ্ববিদ্যালয় খালি। খেতের আইল খালি। কলকারখানা খালি। এসবে কোনো রাজনীতি নেই, রাজনীতি হলো মন্দিরে আর মসজিদে। কাজেই এখন মুক্তিযুদ্ধের উল্টো স্রোতে গেছে দেশ। মুক্তিযুদ্ধ অনুযায়ী তো ধর্ম হবে যার যার, রাষ্ট্র হবে সবার। ফিত দুনিয়া। দুনিয়াদারি। চাল-ডালের দাম কী হবে? পড়ালেখা কী হবে? শিল্পকারখানা কী হবে? চাকরিবাকরি কী হবে? এগুলো হলো রাজনীতি। সে রাজনীতিটা আজ অনুপস্থিত। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে পারি, গত ১৫ বছরে মানুষের মন থেকে এ রাজনীতিটা একেবারেই উঠে গেছে। শেখ হাসিনা এবং তাঁর হাইব্রিড নেতারা এসব একেবারে ধ্বংস করে গেছেন। একদম ধ্বংস করে চলে গেছেন। এখন কবে আসবে আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং পরের প্রজন্ম, জানি না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক একটি শক্তিশালী শক্তি এ দেশে গড়ে ওঠা উচিত; যা হবে ভালোমানুষের দল। সাংঘাতিকভাবে ভালোমানুষের দল। মুক্তিযোদ্ধাদের একটা শক্তিশালী টিম হওয়া উচিত। এ টিম ছাড়া বিশ্বকাপ কেউ আনতে পারবে না বাংলাদেশের জন্য।
ফজলুর রহমান : মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী ও রাজনীতিক
অনুলিখন : শফিউল আলম দোলন