সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারত কী করবে জানি না। তবে ভারত যদি তাঁকে ফেরত না দেয়, তা হলেও তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার চলবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান।
গতকাল প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। টবি ক্যাডম্যান বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারে আন্তর্জাতিক মান মেনে চলা হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের দু-একটি ধারা আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা যেতে পারে। গণহত্যার বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এর আগে সকাল ৯টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ টবি ক্যাডম্যান। পরে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদার প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম, বিএম সুলতান মাহমুদ ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। টবি ক্যাডম্যান বলেন, আমি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিফ প্রসিকিউটরের পরামর্শ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। এ পর্যন্ত আমার বাংলাদেশে দুবার আসা হয়েছে। আমি মূলত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন, নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার প্রক্রিয়া চালানোর বিষয়ে পরামর্শ দেব। বিগত সরকারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা অতটা ভালো ছিল না, এটা বলাই যায়। সে সময়ের বিচার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার বেশি ছিল। টবি ক্যাডম্যান বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় স্পষ্টভাবে বলেছি- এ যাবৎকালে যত বিচার প্রক্রিয়া হয়েছে, তার মধ্যে এবারের বিচার প্রক্রিয়াটি খুবই স্বচ্ছ হতে হবে। পাশাপাশি আজ (গতকাল) প্রসিকিউটর টিমের সঙ্গে আলোচনা করে যা দেখেছি, তারা খুবই সুন্দরভাবে এই বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করছেন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে বলতে চাই- এই বিচারকাজের বিষয়ে আপনাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে, যাতে করে প্রসিকিউটর টিম ও তদন্ত সংস্থা সুন্দরভাবে তাদের কাজ করে এ বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারে। এবারের বিচার প্রক্রিয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, আমার একটাই অনুরোধ থাকবে, আমি যাদের সঙ্গে কাজ করছি, তাদের (প্রসিকিউটর টিম) কাজে যেন কোনো প্রকার পলিটিক্যাল হস্তক্ষেপ না করা হয়। এ বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক কমিউনিটির পুরো সাপোর্ট থাকবে।
এ বিষয়ে আমি জাতিসংঘ, ইউকে গভর্নমেন্ট ও আমেরিকার গভর্নমেন্টসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করেছে। তারা আশাবাদী এ বিচারকাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে আবারও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টার হিসেবে আমার প্রধান কাজ হচ্ছে, এই বিচার প্রক্রিয়াটি যেন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়াতে পরিচালিত হয়, সে বিষয়ে প্রসিকিউটর টিমকে সহায়তা করা। এই মামলার আসামির (শেখ হাসিনা) মৃত্যুদন্ড হবে বা মুক্তি পাবেন, তা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়।