অবিলম্বে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমার সরকারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ এবং রোহিঙ্গাদের বন্দুকের মুখে ঠেলে না দেওয়ার আহ্বানসহ আট দফা দাবিনামা পেশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের উদ্যোগের আহ্বানের পাশাপাশি অবিলম্বে মিয়ানমারের কাছে সীমান্তে যৌথ অভিযানে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবিও এর মধ্যে রয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে গতকাল ‘রোহিঙ্গা সমস্যা : একটি মানবিক ইস্যু’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ এসব দাবি জানান। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ ও গবেষক ড. তোফায়েল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। লিখিত বক্তব্যে ড. সি আর আবরার বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার বর্তমানে উত্তর আরাকানে জাতিগত নিধনযজ্ঞে লিপ্ত। তারা রোহিঙ্গাদের ওপর গুলিবর্ষণ, বেয়নেট চার্জ থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার গানশিপ ব্যবহার করছে। হিউম্যান রাইটসওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপগ্রহের মাধ্যমে ধারণকৃত ছবি থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, মংদু ও রাথিদং অঞ্চলের অন্তত ১০টি এলাকায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার জুড়ে আগুনে ভস্মীভূত হওয়া বাড়িঘরের আলামত পাওয়া গেছে। এ ধরনের চরম পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে শরণার্থী হচ্ছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৭৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন এবং আরও বিপুলসংখ্যক প্রবেশের অভিপ্রায়ে সীমান্ত পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—১১ সেপ্টেম্বর থেকে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হোক; আমাদের প্রতিবেশী ও অন্যান্য বন্ধুরাষ্ট্রকে এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হোক; রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বেঁচে থাকার ও জীবনধারণের ন্যূনতম সুযোগ নিশ্চিত করা হোক।
; এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর চাপ লাঘবের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্যের দাবি উত্থাপন করা হোক; শরণার্থীদের দায় কেবল বাংলাদেশের হতে পারে না, এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করলেও তৃতীয় দেশসমূহে পুনর্বাসনের আশু উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে দাবি উত্থাপন এবং এ লক্ষ্যে কূটনৈতিক তত্পরতা জোরদার করা হোক; শরণার্থী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ, অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচারের ব্যবস্থা এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কূটনৈতিক তত্পরতা জোরদার করা হোক; মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের দাবি সংশ্লিষ্ট মহলে উত্থাপন করা হোক; শরণার্থীদের কার্যকরভাবে সেবা প্রদানে সমন্বয় আনা, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদের নথিভুক্ত করা এবং পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক; শরণার্থীদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, আশ্রয়সহ অন্যান্য সেবা প্রদানের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠনকে সম্পৃক্ত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক; জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত ‘রাখাইন রাজ্য আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরামর্শক কমিশন’-এর প্রতিবেদনে উল্লিখিত সুপারিশসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।