২০ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:১১

রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে স্থবির মৎস্য উৎপাদন, ব্যবসায় ধস

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে স্থবির মৎস্য উৎপাদন, ব্যবসায় ধস

হঠাৎ স্থবির হয়ে পড়েছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য উৎপাদন। তাতেই ধস নেমেছে মৎস্য ব্যবসায়। ভরা মৌসুমে মাছ শূন্য রাঙামাটির ফিসারি ঘাট। বিপাকে প্রায় ২০ হাজার জেলে পরিবার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কচুরিপানা অপসারণ ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে হ্রদ পুনরুদ্ধার করা না হলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে সম্ভাবনাময় মিঠা পানির মাছের ভাণ্ডার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ।

রাঙামাটি বিএফডিসির সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের নভেম্বর থেকে কমতে থাকে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ। ২০২১-২২ অর্থ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মৎস্য আহরণ হয় ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৮৬৩ কেজি। যার রাজস্ব আদায় হয় ৩ কোটি ৯ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৯.৫০ টাকা। আর অক্টোবর মাসে মৎস্য আহরণ হয় ১ কোটি ২৩ লাখ ৫ হাজার ৯১৯ কেজি। যার রাজস্ব আদায় হয় ২ কোটি ১৯ লাখ ২০ হাজার ৯৫৯ টাকা। আর নভেম্বর মাসে আহরণ দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪৬ কেজিতে। যার রাজস্ব আদায় হয় মাত্র ১৩ কোটি ৫৯ লাখ ২ হাজার ৯১৮.৫০ টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থ বছরে সেপ্টম্বর মাসে মৎস্য আহরণ হয় ৫৯৬৭৫৫ আর রাজস্ব আদায় হয় ১৭২০৫৮১২ টাকা। অক্টোবর মাসে মৎস্য আহরণ হয় ৮৫৩৫৩ কেজি। আর রাজস্ব আদায় হয় ১৫২৩১১০৬ টাকা। আর নভেম্বর মাসে মৎস্য আহরণ হয় ৬৯১১৩ কেজি। আর রাজস্ব আদায় হয় ১২৩০৩০৩৭.৫০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছর টানা ৪ মাস অর্থাৎ মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস পর্যন্ত রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ ছিল। সেপ্টম্বর মাস থেকে হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হয়। অন্যান্য বছর ঠিক এসময় মাছের বাম্পার আহরণ হলেও এবার ভিন্ন চিত্র। হ্রদে জেলেদের জালে মিলছে মাছ। তাই স্থবির হয়ে পরেছে কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য উৎপাদন। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মৎস্যজীবীদের ব্যবসা-বাণিজ্য। বেকার হয়ে পড়েছে শ্রমিক-কর্মচারীরা।

তবে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে হঠাৎ কেন মাছ উৎপাদন কমে গেছে তার সঠিক কোন জবাব দিতে পারেনি রাঙামাটি মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  ড. আজহার আলী। তিনি বলেন, আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কাপ্তাই হ্রদে মাছেরা সঠিক প্রজনন করতে পারছে না। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য প্রজননের ৪টি চ্যানেল আছে সেগুলো হচ্ছে বরকল, কাচালং, চেঙ্গি ও রীক্ষ্যং। তার মধ্যে একেবারে মৃত প্রায় রীক্ষ্যং ও চেঙ্গি। বিলুপ্তের পথে কাচালংও। এখন শুধু একটি চ্যানেল বরকল সচল রয়েছে। এ চ্যানেলটাও নষ্ট হয়ে গেলে হ্রদের মাছেরা আর সুষ্ঠু প্রজনন করতে পারবে না। বংশ বৃদ্ধি হবে না মাছের। শুধু তাই নয়, হ্রদে মাছ আহরণের নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। একটা সময় ৪ বার মাছ আহরণ করতো জেলেরা। কিন্তু এখন ২৪ ঘণ্টা মাছ আহরণ করা হয়। যার কারণে মা মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। একই সাথে অবৈধ শিকারের কারণেও মাছ সঠিকভাবে বংশ বৃদ্ধি করতে পারছে না। একটা সময় রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৬৪ প্রজাতির মাছ আহরণ হতো। এখন শুরু ৫৯ প্রজাতির মাছ আহরণ হয়। মাছ বিলুপ্তের কারণ উদ্ভাবন করতে হলে গবেষণা হেচারি প্রয়োজন। সেটা রাঙামাটিতে নেই।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্র ব্যবস্থাপক লে. কর্নেল মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ দেশের কার্প জাতীয়  মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের একটি অন্যতম স্থান। এ হ্রদে  প্রতি বছর প্রাকৃতিক প্রজনন কৃত মাছের মধ্যে শতকরা ৩১ ভাগ কাতল, ১২ ভাগ রুই, শতকরা ৭ ভাগ মৃগেল ও ৫১ ভাগ কালিবাউশের প্রজনন হয়। যা দেশের সামগ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের রাজস্ব আয়ের বিরাট একটি অংশ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং না হওয়ার কারণে আর কচুরিপানার জঞ্জালের কারণে মাছ আহরণ কমতে শুরু করেছে।

এভাবে মাছের উৎপাদন কমতে থাকলে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে থেকে মাছ আহরণ বন্ধ করে দিতে হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর