১১ মার্চ, ২০২৩ ১৪:৪৪

কেঁচো সারেই সংসারে স্বচ্ছলতা

দিনাজপুর প্রতিনিধি

কেঁচো সারেই সংসারে স্বচ্ছলতা

সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে কেঁচো সার উৎপাদন করে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন দিনাজপুরের তাসলিমা নাসরিন। বাড়ির উঠানেই ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে এই নারী সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। এখন খরচ বাদ দিয়েই মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় করছেন। ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন এটি বাণিজ্যিক খামারে রূপ নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্যাকেটজাত করে কেঁচো সার বিক্রির অনুমতি দিলে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খামারটি বড় হলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো এমনটাই বললেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মালদহ গ্রামের তাসলিমা নাসরিন।

তাসলিমা নাসরিন জানান, নবাবগঞ্জের মালদহ গ্রামের এক কীটনাশক কোম্পানির মাঠকর্মী গোলাম রব্বানীর সাথে তার বিয়ে হয়। স্বামীর আয়ে ঠিকমতো সংসার চলছিল না। অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। স্নাতক পাস করে স্থানীয় কৃষি সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। সমিতির মাধ্যমে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেন। রংপুর থেকে প্রথম জৈব সারের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৯ সালে নিজের গৃহপালিত গরুর গোবর ও বিদেশি কেঁচো কিনে বাড়ির উঠানে ১৪টি রিং বসিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। পরে উৎপাদিত সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। ওই সারে ভালো ফলন হওয়ায় বেড়ে যায় চাহিদা। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে উৎপাদনও। এখন তার খামারে ১৩০টি রিংয়ে উৎপাদন হয় কেঁচো সার। শুরুর দিকে খামারে একা কাজ করলেও এখন চারজন শ্রমিক কাজ করেন বলে জানান তিনি। 

তাসলিমা বলেন, ‘৪ বছর আগে ৪০০০ টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করেন। এখন প্রতি মণ কেঁচো সার ১০০০ টাকায় বিক্রি করেন ও জৈব সার ৪০০ টাকা মণ। প্রতি মাসে খামারে ১০-১২ মণ কেঁচো ও ২০-২৫ মণ জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে। কেঁচো ও সার বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে মাসে ২০-২৫হাজার টাকা আয় হয়। এই আয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।’
 
প্যাকেটজাত করে সার বিক্রির অনুমতি না পাওয়ায় খামারের পরিধি বাড়াতে পারছি না উল্লেখ করে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ প্যাকেটজাত করে বিক্রির অনুমতি দিলে উৎপাদন বাড়াতে এবং খামারটি বড় হলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারতাম।’

ওই গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘গত দুইবছর ধরে তাসলিমার খামারের তৈরি সার কিনে ক্ষেতে প্রয়োগ করে ভালো ফলন পাচ্ছি। এলাকার অনেকে এখন তাসলিমার তৈরি সার প্রয়োগ করে চাষ করছেন। এতে ভালো ফলন হচ্ছে সবার। এজন্য দিন দিন তার সারের চাহিদা বাড়ছে।’
 
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, ‘খেতে কেঁচো সার প্রয়োগে যে কোনো ফসলের ফলন ভালো হয়। ফসলের রোগবালাই কম হয়। মাটির গুণাগুণ বেড়ে যায়। কৃষি অফিস থেকে উদ্যোক্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। তাসলিমার মতো নবাবগঞ্জের অনেক উদ্যোক্তা কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। তাসলিমা তার খামারের লাইসেন্স পেতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে সহযোগিতা করবো আমরা।’

 

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর