দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোন চিত্রশিল্পী রং তুলিতে মনের খেয়ালে এঁকেছেন। লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপি, ম্যাজেন্টা, কমলা, রানী গোলাপি ও জাম রঙের যেন খেলা চলছে। রঙের দুনিয়া যেন। সেই রঙ ঘরে বাতাস লেগে দুলে উঠছে রঙগুলো। কাছে যেতেই জারবেরা ফুলের রঙিন রঙে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছে মানব মনে।
আর রঙিন জারবেরা চাষ করে নিজের জীবন ও সংসার জীবনেও রঙিনতার ছোঁয়া দিয়েছেন ফুল চাষি আফছার আলীর। মাত্র দুই বছরে ৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিনি প্রায় ৩০ লাখ টাকার জারবেরা ফুল বিক্রি করেছেন। তার সফলতা দেখে আশপাশের বেকার তরুণরাও ফুল চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন।
জানা যায়, বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয় এবং উচ্চমূল্যের ফুল জারবেরা চাষে ভাগ্য বদলে গেছে ফুল চাষি আফছার আলীর। তিনি পড়ালেখা করে চাকরির পিছন না ছুটে উদ্যোগ নিয়েছেন ফুল চাষের। দুই বছর ধরে ফুল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম ইউনিয়নের গোবরধনপুর গ্রামের আফছার আলী ২০২২ সালে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন জারবেরা ফুলের চাষ। ১ বিঘা জমিতে তিনি টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এই চাষ শুরু করেন। পলিনেট হাউজ নামে তার বাগানে লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপি, ম্যাজেন্টা, কমলা, রানী গোলাপি ও জাম রঙের জারবেরা ফুল শোভা পাচ্ছে। ভারতের পুনে থেকে জারবেরা ফুলের বিভিন্নজাত সংগ্রহ করে আমদানি করে চাষ শুরু করেন তিনি। চারা রোপণের তিন মাসের মধ্যেই প্রথম সফলতা পান এই চাষি। দুই বছরে তার ৮ লাখ টাকা খরচ হলেও ফুল বিক্রি করেছেন প্রায় ৩০ লাখ টাকার। তার এমন সফলতা দেখে আশপাশের অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন ফুল চাষে। পাশাপাশি এই চাষি গোলাপ চাষেও সফলতা পেয়েছেন। তিনি থাই গোলাপের বাগান করেছেন।
এছাড়া চাষি আফছার আলী সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন। দুই দিন পর পর ফুল তুলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগসহ ঢাকাতে এই ফুল বিক্রি করছেন তিনি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জারবেরা চাষে এখন লাভের মুখ দেখছেন।
ফুল চাষি আফছার আলীর বাগান ঘুরে দেখা যায়, পলিনেট হাউজ নামের এই বাগানে বাহারি রঙের জারবেরা ফুল ফুটে আছে। রঙ অনুযায়ী চারাগুলো আলাদা আলাদা সারিতে রোপণ করা হয়েছে। জারবেরা চাষে খরচ বেশি হলেও এর লাভও বেশি। খরচ বেশি হওয়ার প্রধান কারণ জারবেরা বাগানের উপরে পলিশেড দিতে হয়। একটি শেডেই খরচ পড়ে প্রায় ৬ লাখ টাকার মতো। তবে একবার শেড দিলে সেটি ৫ থেকে ৬ বছর পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী থাকে। চাষি আফছার আলীকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সরকারিভাবে শেড তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এতে করে চাষ খরচ অনেকটা কমে গেছে। জারবেরার চারা লাগানোর ৯০ দিনের মধ্যেই ফুল দেয়। প্রতিদিন বাগান থেকে দুই’শ থেকে আড়াইশ' ফুল তোলা যায়।
ফুলের দাম সব সময় পাইকারি বাজারে ১২ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। তবে জারবেরা গাছের পরিচর্যা বেশি করতে হয়। গাছে পচন রোগ বেশি মাত্রায় হয়। জারবেরা ফুল গাছ থেকে তোলার পর ১০ থেকে ১৫ দিন এবং গাছে ফোটা অবস্থায় ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। ফলে এর চাহিদা অনেক। সারা বছর ধরেই জারবেরা ফুল ফোটে। তবে এপ্রিল-মে হলো ভরা মৌসুম। সব ধরনের জলবায়ুতেই এরা বেঁচে থাকতে পারে। উজ্জ্বল রোদের সঙ্গেই সখ্যতা বেশি। বাংলাদেশে শীত ও শীতের শেষ ভাগে জারবেরা ভালো হয়। পলিশেড করে চাষ করলে সারা বছরই ভালো ফলন হয়। একটি জারবেরা ফুল গাছের জীবনকাল প্রায় চার বছর। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একটি গাছ থেকে বছরে ৮০ থেকে ৯০টি ফুল পাওয়া যায়।
ফুল চাষি আফছার আলী জানান, পলিনেট হাউজ নামে শেডের মাধ্যমে ২০২২ সাল থেকে ফুলের চাষ শুরু করেন। ভারতের পুনে থেকে আমদানি করে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে চাষ শুরু করেন তিনি। প্রায় ৮ লাখ টাকা লগ্নি করে জারবেরা ফুল চাষের পর বিক্রি করেছেন প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় পরিসরে চাষের স্বপ্ন দেখছেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, উচ্চমূল্যের এই ফুল চাষে চাষীদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। বগুড়া জেলা ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী আবহাওয়া এবং মাটি বিদ্যমান রয়েছে। জারবেরা ফুল চাষ করে চাষীদের ভাগ্য বদলেছে। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ফুলচাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। বগুড়ার সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর এবং শেরপুর উপজেলায় বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করছেন কৃষকরা।
বিডি প্রতিদিন/এমএস