কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমেশপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে উৎপাদিত সবজির চারা পাড়ি দিচ্ছে সারাদেশে। প্রায় ৭০ বছর ধরে এই এলাকায় সবজির চারা উৎপাদন হয়ে আসছে। চলতি মৌসুমে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। গত মৌসুমে সমেশপুর, ঢাকলাপাড়া, কালাকচুয়া, নিমসার ও কোরপাই এলাকায় ২০ একর জমিতে চারা উৎপাদন হলেও এবার জলাবদ্ধতার কারণে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ একরে।
শুক্রবার সরেজমিন সমেশপুরে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই মাঠজুড়ে সবজি চারা উৎপাদনের ব্যস্ততা। কেউ চারায় পানি দিচ্ছেন, কেউ তুলছেন, কেউবা দরদাম করছেন। কৃষকরা ক্রেতাদের গাড়িতে চারা তুলে দিতে ব্যস্ত, আর সেই চারার বিনিময়ে নগদ টাকা হাতে পেয়েই ক্লান্তি ভুলে খুশিতে ভরে উঠছে তাদের মুখ। দূরদূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারাও সাশ্রয়ী দামে ভালো মানের চারা পেয়ে সন্তুষ্ট। মাঠ তদারকি করতে দেখা যায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইভা আক্তারকে। তারা কৃষকদের সঠিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছেন।
চট্টগ্রামের মীরেরশরাই উপজেলার গোপালনগর থেকে এসেছেন শাহ আলম। তিনি বলেন, এখানের চারার মান ভালো হওয়ায় এত দূর থেকে এসেছি। আজ বাঁধাকপি ও ফুলকপির চারা কিনেছি। সাশ্রয়ী দামে ভালো চারা পাওয়া যায়।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে আসা নুর মোহাম্মদ বলেন, ৩০ বছর ধরে এখান থেকে চারা কিনছি। এবার ২৪ শতক জমিতে চারা লাগাবো। ৬ হাজার টাকার চারা কিনেছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষক দোলন রায় বলেন, সবজির চারার জন্য সমেশপুর ও আশপাশের গ্রামগুলো অনেক প্রসিদ্ধ। আমরা চারজন একসঙ্গে এসেছি।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার রামনগর থেকে আসা আবুল হাসেম বলেন, ২০ বছর ধরে সবজির চাষ করি। এখানের চারার মান ভালো—তাই বারবার আসি।
৩৫ বছর ধরে চারা উৎপাদন করছেন সিরাজ মিয়া। তিনি বলেন, আমার চারার মান ভালো, একটু বড় হলেই ক্রেতারা নিয়ে যায়। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা আসেন। সার–বীজের দাম কমলে লাভ আরও বাড়বে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০ বছর ধরে চারা ব্যবসা করি। জলাবদ্ধতার কারণে ৬ মাসের ব্যবসা মাত্র ২ মাস করতে পারি। আবার বিদেশি বীজ বেশি দামে কিনতে হয়। দেশি বীজ কম দামে পেলে খরচ কমবে।
হুমায়ুন কবির বলেন, ২৫ বছর ধরে চারা উৎপাদন করছি। এবার লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ক্যাপসিকাম চারা করেছি। সার–বীজের দাম কমলে লাভ আরও বাড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিণা আক্তার বলেন, এখানে চারা উৎপাদন এখন শিল্পে পরিণত হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে এ মৌসুমে উৎপাদন কিছুটা কমেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা কাজ করছি।
বিডি-প্রতিদিন/মাইনুল