বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হত নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। ঋতু চক্রের পথ পরিক্রমায় হেমন্ত কালের অগ্রহায়ণ মাসের যাত্রা শুরু। অগ্রহায়ণকে ঘিরে নবান্নের ঘ্রাণে ভরে উঠে কৃষকের অঙ্গিনা।
এ অঞ্চলে কৃষকদের ঘরে ঘরে আমন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। গ্রামীণ জীবন থেকে নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসলেও অনেকে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাথার চেষ্টা করছেন। বাজারে ধানের দাম ভাল এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ভাল ভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারায় কৃষকরা বেজায় খুশি।
জানা গেছে, বাংলার প্রকৃতিতে অগ্রহায়ণ এলেই কৃষককেরা দিগন্ত জুড়ে ধানকাটা মাড়াই উৎসবে মেতে উঠেন কৃষক। ব্যস্ত সময় কাটান কৃষক-কৃষাণীরা। ধান তোলার গান ভেসে বেড়ায় বাতাসে বাতাসে। কৃষকের বাড়ির আঙ্গিনা ভরে উঠে সোনালী ধানে। নতুন চালের ভাতে ভিন্ন এক আমেজ এনে দেয় কৃষক পরিবারে। অনেক পরিবারে তৈরি হয় নতুন চালের পিঠা, ক্ষীর,পায়েসসহ নানা উপাদেয় খাদ্য।
নবান্ন শব্দের অর্থ নতুন অন্ন। নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবকেই নবান্ন উৎসব বলা হলেও রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বাস্তব জীবন থেকে এই উৎসবটি অচেনা এক দূরে চলে যেতে বসলেও কেউ কেউ ধরে রেখেছেন পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য।
রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার আব্দুল মতিন বলেন, ‘আগে নবান্ন উৎসব ধুমধাম করে পালিত হত। এখন ধুমধাম না থাকলেও বাপ-দাদার ঐতিহ্যটি ধরে রেখেছে তার পরিবার।’
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যানী ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম বুলবুল জানালেন, ১০ বছর আগেও ধুমধাম করে পহেলা অগ্রহায়ণে তিনি নবান্ন পালন করতেন। নবান্নে তিনি আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন। নবান্ন উপলক্ষে ২ দিন আগে সকাল বেলা গোসল সেরে পবিত্র হয়ে বাম হাত দিয়ে এক মুঠি ধান কর্তন করে নবান্নের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করতাম। বেশ কবছর থেকে তার বাড়িতে এসব অনুষ্ঠান অনুপস্থিত।
রংপুর নগরীর ৭ নং ওয়ার্ডের আব্দুস সাত্তারের ছেলে চাকরিজীবী তরুন আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, ‘আমি ছোট বেলায় দেখেছি, দাদা-দাদী নানা-নানি আত্মীয়-স্বজন সকলে মিলে নবান্ন উৎসব পালন করত। ধান ঘরে তোলার দিন মসজিদের ইমামকে ডেকে দোয়া পড়িয়ে নবান্ন উৎসব শুরু করা হত। সবাই মিলে এক সাথে দুপুরের খাবার খেতাম।’
ইতিহাস লেখক জুবায়ের আলী জুয়েল বলেন, ‘গ্রামে গঞ্জে আবহমানকাল ধরে নবান্ন উৎসব অত্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়ে এলেও বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই উৎসবে ভাটা পড়েছে।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় প্রায় সোয়া ৬ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক