দিনাজপুরের বিস্তৃত মাঠজুড়ে দেখা যাচ্ছে নান্দনিক দৃশ্য। ইরি-বোরো মৌসুমের সোনালি ধানের শীষ বাতাসে দুলছে, আর তাতেই জেগে উঠছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই মাঠের এই ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা। নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দে উৎসবমুখর হয়ে উঠছে কৃষক পরিবারগুলো।
অনেকে আগেভাগেই ফসল কাটার জন্য কৃষি শ্রমিক ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করে রেখেছেন। তবে এবারও আবহাওয়া এবং ধানের বাজারমূল্য নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ভান্ডারা ইউনিয়নের বালান্দোর গ্রামের কৃষক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘ইরি-বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে আছে। দেশের অনেক এলাকায় শিলাবৃষ্টি হলেও আমাদের এলাকায় এখনো বড় কোনো ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। তবে এই মুহূর্তে শিলাবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ বছর আমি ব্রি-৮৮ জাতের ধান আবাদ করেছি। ফলন ভালো হবে বলেই আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বাজারদর ভালো হলে কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন।’
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। তবে তা ছাড়িয়ে ১৬ হাজার ৪০ হেক্টরে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘অন্য বছর ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান বেশি আবাদ হলেও এবার ব্রি-৮৮, ৮৯, ১০০, ১০২, ১০৪ সহ আধুনিক জাতের ধান বেশি চাষ হয়েছে। এসব জাত পানি সাশ্রয়ী, স্বল্পজীবন, উচ্চফলনশীল এবং রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধে কার্যকর।’
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৭২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে অর্জিত জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে ২৯ হাজার ১২০ হেক্টর এবং উফশী ধান এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে।
ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, হাইব্রিড ধানে প্রতি হেক্টরে ৫ মেট্রিক টন এবং উফশী ধানে প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন। সব মিলিয়ে এ মৌসুমে দিনাজপুরে মোট ৮ লাখ ২ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আশিক