৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৫:৪০

জাবিতে উদ্বেগজনক হারে কম আসছে অতিথি পাখি

জাবি প্রতিনিধি

জাবিতে উদ্বেগজনক হারে কম আসছে অতিথি পাখি

প্রকৃতিতে শীতের হাওয়া বইছে। সাথে উত্তরের হিমালয়ের অঞ্চল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। তবে এবছর অতিথি পাখির সংখ্যা তুলনামূলক কম। গত বছরগুলোর চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ পাখির আগমন কমেছে। দর্শনার্থীর উৎপাত, লেকের পাড়ে কাঁটাতারের বেড়া প্রদান না করা, লেকপাড়ে যানবাহন পার্কিং করা, জলাশয়ের কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার না করার প্রভৃতি কারণে পাখির সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছেন পাখিবিশেষজ্ঞরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯টি জলাশয়ের মধ্যে ১০টি জলাশয় ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানায় প্রায় পুরোপুরি ভরাট হয়ে গেছে। বাকি জলাশয়গুলোতে পানি থাকলেও জলজ আগাছায় ছেয়ে গেছে। যেগুলোতে পাখি বসবাসের উপযোগী নয়। তবে গত নভেম্বর মাসে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের পশ্চিম পাশের লেকে এবং সংরক্ষিত ডব্লিউআরচি'র পুকুরে প্রায় ৫ শতাধিক অতিথি পাখি এসেছে। সেখানে পাখি দেখতে নিয়মিত ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তাদেরকে পাখি উড়াতে বোতল, ইট, পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম পাখি আসায় হতাশা প্রকাশ করেন তারা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, শীতে দুই ধরনের পাখি এসে থাকে ক্যাম্পাসে। একধরনের পাখি ডাঙায় অন্য প্রজাতি পানিতে থাকে। এদের বেশিরভাগই হাঁসজাতীয়। এরমধ্যে নাকতাহাঁস, খুনতেহাঁস, জিরিয়াহাঁস, ভুতিহাঁস, লেঞ্জাহাঁস, আফ্রিকান কম্বডাক, ছোট সরালি, বড় সরালি, পাতারিহাঁস, গ্রেটার স্টর্ক, ফুলুরিহাঁস এবং ইউরেশিয় সিঁথিহাঁস, গারগেনি, রাইনেক, খঞ্জনা, টাইগা, শামুক খোল, জলপিপি, ডাহুক উল্লেখযোগ্য হারে দেখা যায়। 

১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম জাবিতে অতিথি পাখি আসে। সেবার ৪ হাজারের মতো পাখির দেখা মেলে। গতবছর এই সময়ে দেশি-বিদেশি প্রায় আড়াই হাজার পরিযায়ী বা অতিথি পাখি আসে। এর আগে, ২০২১ সালে মোট ৪ হাজার ৫০০ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি আসে ২০২০ সালের কারোনাকালীন মৌসুমে। সেবার ৮ হাজারের বেশি অতিথি পাখি এসেছিল। ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আসা মোট পাখির সংখ্যা যথাক্রমে ৬৭৮০, ৪৭৩১, ৪৯৭৫, ৪৭০৯ টি ছিল বলে জানিয়েছে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

সাধারণত, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে জাবির লেকগুলোতে অতিথি পাখি আসা শুরু করে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ জলাশয় পরিণত হয় অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক অতিথি পাখি তুষারপাতের ফলে সাইবেরিয়া, চীনের জিনজিয়াং, মঙ্গোলিয়া, নেপাল হতে আসে বলে জানা যায়। 

পাখি বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও শীত কম থাকার কারণে পাখিদের আগমন কম দেখা যাচ্ছে। তবে পাখির নিরাপদ আবাসস্থলের ব্যবস্থা না থাকাটাও এর জন্য দায়ী। পাখির সুরক্ষায় লেক সংস্কার, দর্শনার্থীদের উৎপাত বন্ধে প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যবস্থাপনা শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বাবুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অন্য বছরগুলোতে অতিথি পাখির আগমনে জলাশয় ও লেক সংস্কারের জন্য কিছু অর্থের বরাদ্দ থাকতো। এবছর কোন টাকা বরাদ্দ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তারপরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর