বাংলাদেশে আর ভারতের আধিপত্য চলবে না বলে কড়া বার্তা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘ভারতের আগ্রাসনকে মেনে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বছরের পর বছর বাংলাদেশে শাসন করেছে। তারা দিল্লিকে কেবলা বানিয়ে ঢাকাকে শাসন করেছে। অথচ চারপাশের দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নেই। তাই ভারতের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা হবে। আর সম্পর্ক হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে।’
বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট আয়োজিত ‘বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ধর্মীয় কারণে হয়নি। ভারত বছরের পর বছর নির্যাতনমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়েছে। আর এসবের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সবসময় সহনীয়তা দেখিয়েছে। ভারতের শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের লড়াই অব্যাহত থাকবে। ভারত আর কোনদিনও বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের দায়বদ্ধতা সবার ওপরে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশে বসে কিংবা বিদেশ থেকে যতই ষড়যন্ত্র করা হোক তার কোনোটিকে সচল হতে দেওয়া যাবে না। আমরা যদি এবার ব্যর্থ হই বাংলাদেশ আর কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি। সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’
হাসনাত বলেন, ‘বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মৌলিক বিষয়ে মতপার্থক্য খুবই স্বাভাবিক। এটিই হচ্ছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে বাংলাদেশের অখণ্ডটা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই ইস্পাতের ন্যায় শক্ত ঐক্য বজায় রাখবে।’
দেশের প্রশ্নে সমঝোতা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট ছিল ছাত্রজনতার প্রাথমিক বিজয়। তবে আমাদের সামনে যে রাস্তা অনেক বেশি কণ্টকাকীর্ণ। এই রাস্তা পাড়ি দিতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের বিরুদ্ধে দেশি এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার কাঠামো নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আবার কে ক্ষমতায় যাবে সে বিষয় নিয়েও আমাদের নিজেদের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। তবে আমরা অনুরোধ জানাব, আমাদের এই মতপার্থক্য যেন পরম সহিষ্ণুতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এটি যেন আওয়ামী লীগের মতো আগ্রাসী মনোভাবে পরিণত না হয়।’
অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেছেন, এই জাতি যতদিন টিকে থাকবেন, ততদিন জুলাই অভ্যুত্থানের কথা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই বিজয় যেন চিরঞ্জীব থাকে, সেই দোয়া আল্লাহ তায়ালার কাছে করছি। শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত জবি শিক্ষার্থী শহীদ একরামুল হক সাজিদদের বোন ফারজানা হক বলেন, আমার মা এখনও সাজিদের কাপড় বুকে নিয়ে ঘুমায়। আমি আমার ভাই হারিয়েছে, আমার মতো অনেকে তাদের পরিবারের মানুষকে হারিয়েছে। যাদের হারিয়ে এই স্বাধীনতা সেটা যেন বৃথা না যায়। তার জন্য সবাইকে একতা ধরে রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের ভুলে যাবেন না। বিশ্বজিৎকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। জগন্নাথ যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলাদেশে বিশ্বজিৎ, সাজিদকে মনে রাখবে। তাদের জন্য আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা নিতে হবে, শুধু ছাত্রদের নিয়ে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ছাত্ররাজনীতির এজেন্ডা হওয়া উচিত ছাত্রদের নিয়ে কাজ করা। যারা করবে না তাদের ছাত্ররা গ্রহণ করবে না। ছাত্রলীগের মতো কেউ আচরণ করলে তাদের মতো পরিণতি হবে। আমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। আমাদের বর্তমান বড় সংকট হলো শিক্ষা। শিক্ষার যদি সংস্কার না হয়, তাহলে বারবার দিল্লির দাসত্ব করতে হবে। এদেশের জনগণ এবার দিল্লি আধিপত্য রুখে দাঁড়িয়েছে, আগামীতেও করবে। এজন্য দিল্লির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দূর করতে হবে।
জবি ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে গত ১৫ বছরে ছাত্রদল মাঠে ময়দানে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। এ সময় তিনি আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতন হওয়া সকল নেতাকর্মীদের স্মরণ করেন।
জবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইকবাল হোসেন শিকদার বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অনৈতিকতার দিকে চলে যাচ্ছে। জগন্নাথসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা নৈতিকতার উন্নতিতে কোর্স চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শারমিন, সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা। এর আগে, বিকাল সাড়ে তিনটায় কুরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়।
বিডি-প্রতিদিন/শআ