১৫ মে, ২০১৯ ১৯:১২

'আম্মা আমি গেইমও উঠছি, দোয়া কইরো'

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

'আম্মা আমি গেইমও উঠছি, দোয়া কইরো'

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে মৃত্যু হয়েছে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নাজিম উদ্দিনের।

গত বুধবার সকালে ইমুতে ভিডিও কল আসে ছবিরুন নেছার মুঠোফোনে। এটিই ছিল নাজিমের শেষ বার্তা। এতে এক কথায় নাজিম উদ্দিন বলছিলেন, ‘আম্মা আমি গেইমও উঠছি, আমার লাগি দোয়া কইরো।’ আর কোনো যোগাযোগ নেই। 

এরপর সোমবার ইতালি থেকে নাজিমের এক আত্মীয় দেশে ফোন করে জানান, তিউনিসিয়ায় সাগরে নৌকা ডুবে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি মারা গেছেন, ওই নৌকায় নাজিমও ছিলেন। এরপর থেকে মা ছবিরুন নেছার বিলাপ আর থামছে না।

নাজিম উদ্দিনের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের নুরুল্লা গ্রামে। বাবার নাম আজির উদ্দিন, মা ছবিরুন নেছা। 

নাজিম উদ্দিনের চাচা শাহীন আহমদ জানান, নাজিম উদ্দিন সিলেটের মদন মোহন কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে নাজিম উদ্দিন ছিলেন সবার বড়। সিলেট নগরের লেকসিটি আবাসিক এলাকায় নিজেদের তিনতলা বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।

গত বছর ছাতকের উজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা শামীম আহমদ নাজিমকে ইতালি পাঠানোর কথা বলেন। এরপর থেকে নাজিম পরিবারের কাছে বায়না ধরেন ইতালি যাবেন। তার মা-বাবা প্রথমে রাজি না হলেও পরে ছেলের পীড়া পিঁড়িতে রাজি হন। শামীমের সঙ্গে সাত লাখ টাকায় চুক্তি হয়। কথা ছিল প্রথমে অর্ধেক এবং ‘গেমে’ ওঠার পর বাকি টাকা দেয়া হবে। এরপর গত বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রামের আরও দুই তরুণ শরিফ, শহীদসহ নাজিম বাড়ি থেকে ঢাকায় যান। পরে ঢাকা থেকে লিবিয়া।

নাজিমের সঙ্গে লিবিয়া যাওয়া শরিফ গত শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই বাড়িতে ফিরে আসেন। শরিফের বরাত দিয়ে নাজিমের চাচা শাহীন আহমদ জানান, সেখানে বাংলাদেশিদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়। ঠিকমতো খাবার দেয়া হয় না। কোনো কথা বললেই চলে শারীরিক নির্যাতন।

অবশেষে ভূমধ্যসাগরের নোনা জলে লাশ হয়ে ফিরতে হলো থাকে। এঘটনার পর থেকে আদম পাচারকারী শামিম পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিডি প্রতিদিন/১৫ মে ২০১৯/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর