আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন চা শ্রমিকরা। দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে এখনও অনড় তারা। এর মাঝেই আত্মপ্রকাশ করেছে ‘চা শ্রমিক অধিকার পরিষদ’ নামের নতুন সংগঠন।
আজ বৃহস্পতিবার আন্দোলনের ১৩তম দিনে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩৯টি চা বাগানে ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন শ্রমিকরা। দাবি আদায়ে তারা বাগানে বাগানে মিছিল-সমাবেশ করেছেন।
সকালে খেজুরিছড়া চা বাগানের মানববন্ধন করে শ্রমিকরা। এই মানববন্ধনে যোগ দেন বিভিন্ন স্কুল কলেজে পড়ুয়া চা বাগানের শ্রমিকদের সন্তান-শিক্ষার্থীরা।
এদিকে আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে ‘বাংলাদেশ চা শ্রমিক ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের’ ডাকে বিকেলে কালিঘাট চা বাগনের শ্রমিকদের এক সভা অনুষ্টিত হয়। ছাত্র যুক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোহন রবি দাসের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন কালিঘাট চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি অবান তাঁতি। এই সভায় বালিশিলা, লংলা, মনু-ধলই, জুরি ও লস্করপুর ভ্যালির চা বাগানের পঞ্চায়েত প্রধান ও সাধারন শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে মোহন রবি দাসকে আহব্বায়ক ও অবান তাঁতিকে সদস্য সচিব করে ‘চা শ্রমিক অধিকার পরিষদ’ নামে একটি নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষনা দেয়া হয়।
মোহন রবি দাস বলেন, ‘চা শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন এগিয়ে নিতে এই নতুন সংগঠন করা হয়েছে। এই সংগটনে দেশের প্রতিটি চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র যুবক ও মহিলাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। এখন থেকে এই কমিটি শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরির দাবি আদায়ের আন্দোলনের নেতেৃত্ব দেবে।’
এর আগে সকালে শ্রীমঙ্গলে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর কার্যালয়ে শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলামামের আহ্বানে রালিশিলা ভ্যালির পঞ্চায়েত নেতাদের নিয়ে এক সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় জেলা, উপজেলা ও থানা প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভা থেকে বের হয়ে রশিদপুর চা বাগান পঞ্চায়েতের সাধারণ সম্পাদক দুলন চাষা বলেন, ‘আমরা ডিডিএল’র ডাকে এসেছি। এখানে এনে আমাদেরকে কাজে যোগদান করার জন্য বলা হয়েছে। আমরা তাদের কথা মানিনি।’
সাইফ চা বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি কবির মিয়া বলেন, ‘বাগানে কাজ বন্ধ, তলব বন্ধ, শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। অনেকে হাঁস-মুরগি বিক্রি করে গাড়ি ভাড়া দিয়ে এই সভায় এসেছে। কিন্তু এখানে এনে আমাদের ওই একই কথা বলা হচ্ছে। কাজে যোগ দেন। কিন্তু আমরা তো আগেই বলে দিয়েছি প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে না শুনলে আমরা কাজে যোগ দেবনা।’
ফুলছড়া চা বাগান পঞ্চায়েতের সভাপতি জগবন্ধু রায় বলেন, ‘একটা সমাধানের জন্য ডেকেছিল। কিন্তু সমাধান কি কবে হবে। প্রতিটি চা শ্রমিক মা জননীর (প্রধানমন্ত্রীর) আশায় আছে, তার মুখ থেকে শুনতে চায়। মা নিজের মুখে যে স্বান্তনা দেবেন, সন্তাররা সেটাই মেনে নেবে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলী রাজীর মাহমুদ মিঠুন বলেন, ‘আমরা যে ওদের জন্য কাজ করছি, মূলত এটা বুঝানোর জন্যই পঞ্চায়েত নেতাদের নিয়ে বসেছিলাম। তারা যেন বিভ্রান্ত না হয়। কাজে যোগ দেয় এটাই বলেছি।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট থেকে চা শ্রমিকরা বাগানে এই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছিল। এর আগে চার দিন তারা অর্ধদিবস কর্মরিবতি পালন করেছিল। এই সংকট সমধানের সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সাথে শ্রীমঙ্গল ও ঢাকায় চার দফা বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠক গুলোতে কোন সুরাহা হয়নি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল