ইভিএমে জাল ভোট, চাঁদে ছবি দেখার গুজব ছড়ানোর মতো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। ইভিএমে ২৫ শতাংশ ভোট প্রিজাইডিং অফিসারের দেওয়ার সুযোগ আছে এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিইসি একথা বলেন।
তিনি বলেন, এটা হল একবার চাঁদে ছবি দেখার গুজব ছড়ানো হয়েছিল, সেটার মতো। ইভিএম পরিচালনার যে বিধি, তার কোথাও ১ শতাংশ, ২ শতাংশ, ৪ শতাংশ কিংবা ২৫ শতাংশের কথা উল্লেখ নেই। এসব কথার কোনো ভিত্তিই নেই। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, আপনারা বিধিটা দেখেন, সেখানে এরকম কিছু লেখাই নেই। অনেক অভিযোগ আসে যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই, তারপরও অভিযোগ শুনতে হয়।
বুধবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সিইসি। তাছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে এমন আশঙ্কায় এবার উপ-নির্বাচনে কমানো হচ্ছে দায়িত্বপালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও। সিইসি বললেন, যেহেতু ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন হবে, তাই সংঘাতের কোনো শঙ্কা নেই। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যাও যৌক্তিকভাবে কমানো হবে।
উপ-নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ইভিএম এর ওপরই নির্ভর করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ইভিএমে আপত্তির কোনো কারণ নেই। ইভিএমই একমাত্র উপায় যেখানে জাল ভোট দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। অন্য কোন কেন্দ্রের লোক এসে এখানে ভোট দিতে পারবেন না। একবার ভোট দিলে তিনি আবার ভোট দিতে পারবে না। তাছাড়া নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, কারচুপি না হয়, ব্যালট ছিনতাই না হয় এবং যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তাদের পরিশ্রম যাতে লাঘব হয়, সেই চিন্তা করেই ইভিএম করেছি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেছেন, ইভিএম হলে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। এটা যদি চালু থাকে, তাহলে এক সময় নির্বাচন নিয়ে আর কোনো অভিযোগও আসবে না। ৮৬ সালে দেখেছি, নির্বাচন হওয়ার পর একজনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হল, রাতে টেলিভিশনে আরেকজনকে ঘোষণা করা হল, পরদিন গেজেটে দেখা গেল আবার আরেকজনের নাম। নির্বাচনী সংস্কৃতি নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। যদি ইভিএম চালু করতে পারি, এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে সিইসি নুরুল হুদা বলেন, বিজিবি থেকে বলা হয়েছে, যত রিকুইজিশন দেওয়া হয়েছে, অত সংখ্যকের দরকার নেই। পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, যৌক্তিকভাবে কমানো হবে। সংখ্যার দিক থেকে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে তারা এখানে বসে নির্ধারণ করবেন, কমানো কিভাবে যায়। ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের আয়োজন করায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই-কারচুপির কোনো সুযোগ না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যাও কমানোর পক্ষে মত সিইসির।
প্রার্থীদের অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করা যাবে না। অভিযোগ তো করতেই পারে। অভিযোগের ভিত্তি আছে কি না দেখতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো কমিশন খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন সিইসি। ভোটার কম উপস্থিতি বিষয়ে সিইসি বলেন, ভোটার কম হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকে। যদি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হয়, নির্বাচনে যদি সব দল অংশগ্রহণ না করে এবং প্রতিযোগিতা না হয় তখন ভোটার সংখ্যা কম হয়।
মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগমসহ র্যাব-বিজিবি, আনসার, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা ছিলেন। অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ ও নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীদের সাথেও মতবিনিময় করেন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক